## ২৬ টুকরো লাশ উদ্ধার, বন্ধুত্বের আড়ালে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড—আশরাফুলকে খুন করে লাশ দুদিন বাসায় লুকিয়ে রাখার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে
রাজধানীর বুকে এক লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার রেশ এখনো কাটেনি মানুষের মন থেকে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সামনে থেকে রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের (৪২) খণ্ড-বিখণ্ড ২৬ টুকরো লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি কেবল একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নয়, বরং বন্ধুত্বের পবিত্র সম্পর্ককে কলুষিত করে ঘটা এক ভয়াবহ নৃশংসতার প্রতিচ্ছবি। আর সেই লাশ দুদিন ধরে খুনিদের বাসাতেই লুকিয়ে রাখার খবর যেন বিভীষিকাময় এই অধ্যায়কে আরও গা শিউরে ওঠার মতো করে তুলেছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জারেজুল ইসলাম এবং তার প্রেমিকা শামীমাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
**কী ঘটেছিল সেই ভয়াল রাতে?**
গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগ থানাধীন জাতীয় ঈদগাহের সামনে থেকে দুটি ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় আশরাফুল হকের খণ্ডিত মরদেহ। দেহের ২৬টি টুকরো দেখে পুলিশও স্তম্ভিত হয়ে যায়। এই নৃশংসতা এক নিমেষে পুরো শহরকে স্তব্ধ করে দেয় এবং জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। নিহত আশরাফুলের পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে এক ভয়ংকর কাহিনীর পরতে পরতে।
**তদন্ত ও গ্রেফতার: মূল হোতা ও প্রেমিকা আটক**
ঘটনার পরপরই নড়েচড়ে বসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র্যাব-৩-এর যৌথ তৎপরতায় দ্রুতই বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য।
গতকাল শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাতে গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব-৩-এর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। ডিবি জানায়, নিহত আশরাফুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জারেজুল ইসলামকেই কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিএমপি’র গোয়েন্দা (ডিবি) জানিয়েছে, পরকীয়ার জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। বন্ধুত্বের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক গভীর বিদ্বেষ এবং অবৈধ সম্পর্ক।
এদিকে, র্যাব-৩ আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডে জারেজুলের প্রেমিকা শামীমাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, শামীমার সঙ্গে জারেজুলের পরকীয়া সম্পর্কই আশরাফুলকে হত্যার মূল কারণ। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ আলামতও জব্দ করা হয়, যা তদন্তে সহায়ক হবে।
হত্যাকাণ্ডের পর যে তথ্যটি সবচেয়ে বেশি শিউরে ওঠার মতো, তা হলো, আশরাফুলকে খুন করার পর তার লাশ প্রায় দুদিন ধরে জারেজুলের বাসাতেই লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। এরপর নির্মমভাবে খণ্ড-বিখণ্ড করে ড্রামে ভরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ভাবুন একবার, কী পরিমাণ নির্মমতা এবং মানসিক বিকারগ্রস্ততা থাকলে একজন মানুষ এমন একটি কাজ করতে পারে! বন্ধুত্বের এমন মর্মান্তিক পরিণতি এবং পরকীয়ার মতো সম্পর্কের জেরে একটি নিষ্পাপ প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ঘটনা সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের এক করুণ চিত্র তুলে ধরে।
এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত আশরাফুল হকের পরিবারের পক্ষ থেকে জারেজুলকে আসামি করে গতকাল শুক্রবার শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা এবং দেশের সাধারণ মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করছে।
পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ এবং অপরাধীদের গ্রেফতারের ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। আশা করা যায়, খুব দ্রুতই এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পেছনের সমস্ত রহস্য উন্মোচিত হবে এবং দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। নিহত আশরাফুলের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, মানবিক সম্পর্কের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ রক্ষা করা কতটা জরুরি।



