## ২১ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি তিস্তা মহাপরিকল্পনা, আস্থাহীন রংপুরবাসী
তিস্তা মহাপরিকল্পনা – এই নামটি রংপুরবাসীর জন্য যেন এক দীর্ঘশ্বাস। একুশটি বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এই মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের আলোর মুখ দেখেনি রংপুরবাসী। দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর একের পর এক মিথ্যা আশ্বাসের বেড়াজালে পড়ে রংপুরের জনমনে এখন তীব্র হতাশা আর অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত বছরগুলোতে নেতাদের আশ্বাসের বর্ণিল কথায় বহুবার প্রতারিত হয়েছেন তারা, তাই এবার তারা ভোট দিতে চান ভেবেচিন্তে।
নদীর জীবন আর জীবিকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তিস্তা নদী। এই মহাপরিকল্পনা শুধু বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা সেচ সুবিধার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি এই অঞ্চলের কৃষি, অর্থনীতি ও সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, গত দুই দশকে এটি শুধু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিতেই আটকে আছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখা যাওয়ায় রংপুর অঞ্চলে হতাশা এখন এক চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, তারা বহু বছর ধরে এই প্রকল্পের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। প্রতিটি নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা এসেছেন, দিয়েছেন নানা ধরনের আশ্বাস। কিন্তু ভোট শেষ হলেই যেন সব প্রতিশ্রুতি হাওয়া হয়ে গেছে। এই প্রতারণার শিকার হয়ে এবার তারা আর কোনো ফাঁকা বুলিতে বিশ্বাস করতে রাজি নন। তাই এবারের ভোটে তারা বেশ সতর্ক, সিদ্ধান্ত নিতে চান ভেবেচিন্তে। তাদের এই আস্থাহীনতা এবারের নির্বাচনকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা।
গণসংযোগ ও ভোটের প্রচারণায় প্রার্থীরাও তাই এবার বেশ সতর্ক। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার তাদের প্রতিশ্রুতির তালিকায় শীর্ষে থাকছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও রংপুরের সার্বিক উন্নয়নের কথা। তারা জানেন, শুধুমাত্র মুখের কথায় এবার ভোটারদের মন জয় করা কঠিন হবে। উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকারই পারে তাদের হারানো আস্থা কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উত্তরের এই ভোটযজ্ঞকে সত্যিকারের উৎসবমুখর করতে হলে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ। উন্নয়নের স্পষ্ট পরিকল্পনা, যা বাস্তবায়নের বিশ্বাসযোগ্যতা রাখে এবং এমন প্রার্থী দিতে পারলে তবেই ভোটারদের আস্থা পাওয়া সম্ভব হবে। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, চাই কর্মপরিকল্পনা – এই মনোভাবই এখন রংপুরের মানুষের মনে প্রকট।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রংপুর বরাবরই জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। যদিও বর্তমানে নানা কারণে দলটি টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে, তবুও জাতীয় পার্টির রয়েছে নিজস্ব একটি শক্তিশালী ভোটার গোষ্ঠী। এই ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে অন্যদলের প্রার্থীদের। তবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও উন্নয়নের প্রশ্নে এই চিরাচরিত রাজনৈতিক সমীকরণও বদলে যেতে পারে – এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
২১ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা আর আস্থাহীনতা রংপুরবাসীর জীবনকে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এবার শুধু আশ্বাসের রাজনীতি নয়, প্রকৃত উন্নয়নের রাজনীতি দেখতে চান তারা। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এখন শুধু একটি প্রকল্পের নাম নয়, এটি রংপুরবাসীর আবেগ, তাদের অধিকার, তাদের ভবিষ্যৎ। আশা করা যায়, এবার অন্তত তাদের এই দীর্ঘশ্বাস ঘুচিয়ে প্রকৃত উন্নয়নের পথে হাঁটবে উত্তরাঞ্চল।



