## হাজারো মানুষের মশাল মিছিলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি: জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাও!
রংপুরের হিমেল হাওয়াকে গরম করে তুললো হাজারো মানুষের মশাল মিছিলের উত্তাপ। তিস্তা নদীর জীবন ফিরিয়ে আনার আকুল আবেদন নিয়ে এই মানুষগুলো রাস্তায় নেমেছেন একটি নির্দিষ্ট দাবিতে – সেটি হলো তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই, অর্থাৎ নভেম্বরের মধ্যেই এই মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করার দাবি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার রাতে গঙ্গাচড়ার মাটি প্রকম্পিত হলো মশাল প্রজ্বলনের মাধ্যমে।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচিতে গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরের তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকা পরিণত হয়েছিল এক উত্তাল জনসমুদ্রে। ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ – এই স্লোগান যেন কেবল একটি আওয়াজ ছিল না, ছিল তিস্তাপাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা আর অধিকার আদায়ের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর। শত শত মশালের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল তিস্তার পাড়, যা প্রতীকী অর্থে যেন তিস্তার ভবিষ্যৎকে আলোকিত করারই এক দৃঢ় সংকল্প।
কেবল গঙ্গাচড়াই নয়, রংপুরসহ তিস্তা নদীবেষ্টিত ১০টি উপজেলার মোট ৩১টি স্থানে একইসাথে মশাল প্রজ্বালন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এই ব্যাপকতা প্রমাণ করে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি আজ আর কোনো বিচ্ছিন্ন আন্দোলন নয়, এটি এখন এ অঞ্চলের হাজারো মানুষের গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।
এই জোরালো কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিস্তা রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এবং বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু। তিনি তার বক্তব্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিস্তা রক্ষা আন্দোলনের নেতা নজরুল ইসলাম হক্কানীসহ অন্য নেতারাও তাদের বক্তব্যে তিস্তাপাড়ের মানুষের দুর্ভোগ ও এই অঞ্চলের অর্থনীতি রক্ষায় মহাপরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। নেতারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, নভেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু না হলে তাদের আন্দোলন আরও বেগবান হবে।
তিস্তা নদী এ অঞ্চলের জীবনরেখা। একসময়ের খরস্রোতা এই নদী এখন বালুচরে ভরা, শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না বললেই চলে, আর বর্ষায় অপ্রতিরোধ্য ভাঙনে কেড়ে নেয় ফসলি জমি, ঘরবাড়ি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং উজানে বাঁধের কারণে তিস্তা আজ মৃতপ্রায়। এর ফলে এ অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন-জীবিকা ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা এই নদীকে পুনরায় সচল করা, ভাঙন রোধ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং সার্বিকভাবে তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। এটি কেবল একটি প্রকল্প নয়, এটি এই অঞ্চলের কৃষি, অর্থনীতি ও পরিবেশ রক্ষার শেষ আশ্রয়।
গঙ্গাচড়া থেকে শুরু করে তিস্তাপাড়ের বিস্তৃত অঞ্চলের হাজারো মানুষের এই মশাল মিছিল স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে – তিস্তা মহাপরিকল্পনা এখন আর কেবল একটি দাবি নয়, এটি গণদাবিতে পরিণত হয়েছে, যা বাস্তবায়নে সরকারে সদিচ্ছা এখন সময়ের দাবি। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা যে, মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত এমন মৌলিক দাবিকে উপেক্ষা করা যাবে না। আশা করি, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুতই ইতিবাচক সাড়া মিলবে এবং তিস্তা তার হারানো যৌবন ফিরে পাবে, হাজারো মানুষের মুখে হাসি ফুটবে।



