স্বপ্ন পূরণে মাঠে নামছেন হামজারা: ৪৫ বছরের অপেক্ষা ফুরোবে আজ
আজ বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা। জাতীয় দলের সামনে আজ অগ্নিপরীক্ষা – ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের এক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হংকং চায়নার বিপক্ষে মাঠে নামছে জামাল ভুঁইয়া, হামজা চৌধুরী ও তার দল। স্বপ্ন পূরণের পথে এই ম্যাচটি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হয়তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাত আটটায় ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হবে এই রোমাঞ্চকর লড়াই। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৩৮ ধাপ এগিয়ে থাকা এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচটি শুধু একটি ফুটবল ম্যাচ নয়, এটি ৪৫ বছরের অপেক্ষার ইতি টানার একটি সুযোগ। যদি আজ লাল-সবুজের দল জয় ছিনিয়ে আনতে পারে, তবে ২০২৭ এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন বেঁচে থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যদি হার হয়, তবে কার্যত শেষ হয়ে যাবে এই দীর্ঘ প্রতীক্ষা।
আমাদের মেয়েরা গত জুলাইয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আগামী মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় তারা মাঠে নামবে। কিন্তু ছেলেদের দলের ক্ষেত্রে ইতিহাসটা ভিন্ন। তারা একবারই, ১৯৮০ সালে এশিয়ান কাপ খেলেছিল। সেই ৪৫ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়ান কাপে খেলার সুযোগ পেতে হলে আজ হংকং চায়নার বিপক্ষে ৩ পয়েন্টের কোনো বিকল্প নেই।
চার দলের এই গ্রুপে বাংলাদেশের অবস্থা কিছুটা কঠিন। এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচে মাত্র ১ পয়েন্ট অর্জন করেছে তারা – গত মার্চে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র এবং জুনে ঢাকায় সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হার। অন্যদিকে, হংকং দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে। আজ জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৭, আর বাংলাদেশের থাকবে সেই ১। গ্রুপের অন্য ম্যাচে নিজেদের মাঠে ভারত আজ মুখোমুখি হবে সিঙ্গাপুরের। বাংলাদেশের মতো ভারতেরও পয়েন্ট ১, আর সিঙ্গাপুরের ৪। ফলে টিকে থাকতে হলে আজ ভারত ও বাংলাদেশের সামনে জয়টাই সবচেয়ে জরুরি।
তবে এসব পরিসংখ্যান ছাপিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা আজ প্রত্যাশিত জয়ের আশায় বুক বেঁধে আছে। জাতীয় দলের অনুশীলন দেখতে গতকাল সন্ধ্যায় অনেকেই জাতীয় স্টেডিয়ামের ফটকে ভিড় জমিয়েছিলেন। এমনকি ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে এসেছিলেন প্রিয় খেলোয়াড়দের এক ঝলক দেখতে। ম্যাচ নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার কোনো কমতি নেই। হামজা চৌধুরী ঢাকায় এসেই দৃপ্ত কণ্ঠে বলেছেন, ‘আমরা জিতমু।’ তাঁর এই কথায় ভরসা রাখতে চাইছেন ফুটবলপ্রেমীরা। বাংলাদেশ দলের হোটেল, মাঠ সবখানেই ভক্তরা হাজির হয়ে হামজাদের জন্য শুভকামনা জানাচ্ছেন।
আজকের রাত বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। মাঠের খেলোয়াড়দের সাথে গ্যালারির সমর্থন, আর সারা দেশের মানুষের প্রার্থনা – সব মিলে আজ যেন এক ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী হতে পারে বাংলাদেশ। চলো বাংলাদেশ, এগিয়ে চলো লাল-সবুজ!



