## সালমার স্পষ্ট কথা: সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে কিছু বললে তার বান্দারা চুপ থাকবে না
সম্প্রতি দেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অঙ্গনে এক উত্তপ্ত আলোচনার জন্ম দিয়েছে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালাকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বর্তমানে কারাবন্দি। তবে এই ঘটনা শুধু আবুল সরকারের আইনি জটিলতাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এর রেশ ধরে তৈরি হয়েছে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া, যা ছুঁয়ে গেছে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান থেকে শুরু করে পুরো বাউল সম্প্রদায় পর্যন্ত।
**একজনের দায়, পুরো সম্প্রদায়ের খেসারত**
আবুল সরকারের এমন হীন কাজের ফল ভোগ করতে হচ্ছে অন্য নির্দোষ বাউলদেরও। সম্প্রতি মানিকগঞ্জে এর প্রতিবাদে বাউলদের উপর বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন ব্যক্তির ভুল বা ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যের কারণে একটি ঐতিহ্যবাহী ও গর্বিত শিল্পগোষ্ঠীকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে, যেখানে তাদের শিল্প চর্চাই ঝুঁকির মুখে।
বিষয়টি এমন এক মোড় নিয়েছে, যেখানে একদল তথাকথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধি আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করছেন, আবার অন্যদিকে দেশের আপামর জনগণ তার যথাযথ বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন। এই দুই দাবির দ্বন্দ্বে সমাজে তৈরি হয়েছে এক অস্থিরতা।
**সালমার স্পষ্ট বার্তা: প্রভুকে নিয়ে টানাটানি করবেন না**
এই সংকটময় মুহূর্তে মুখ খুলেছেন জনপ্রিয় লোকসংগীতশিল্পী মৌসুমী আক্তার সালমা। তার স্পষ্টবাদী মন্তব্য যেন কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের মনের কথাকেই তুলে ধরেছে। সম্প্রতি এক ভিডিওবার্তায় তিনি আবুল সরকারের কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন।
সালমা তার ভিডিওবার্তায় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “যারা বাউল শিল্পী আছেন, আপনারা গান করেন। কিন্তু এমন কিছু করবেন না যেটার জন্য পুরো শিল্পী সমাজ লজ্জিত হয়। আপনাদের লজ্জার দায় কিন্তু আমরা নেব না।”
তিনি আরও কঠোরভাবে বলেন, “প্রভুকে নিয়ে টানাটানি করবেন না। এটা আমাদের হৃদয়ে লাগে, বুকে আঘাত লাগে, এটা কেউ সহ্য করবে না। মা-বাবাকে গালি দিলেই সহ্য করা যায় না। সেখানে সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে কিছু বললে তার বান্দারা তো চুপ থাকবে না।”
সালমার এই কথাগুলো কেবল তার ব্যক্তিগত মতামত নয়, বরং কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভূতির প্রতিধ্বনি। সৃষ্টিকর্তা, ধর্ম এবং মানুষের বিশ্বাস অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। একজন শিল্পীর যেমন শিল্পকর্মের স্বাধীনতা আছে, তেমনি সমাজের প্রতি তার এক গভীর দায়বদ্ধতাও আছে। এমন কিছু করা উচিত নয়, যা গণমানুষের বিশ্বাসে আঘাত হানে অথবা কোনো সম্প্রদায়কে অসম্মানিত করে।
**শিল্প এবং শ্রদ্ধাবোধের সেতুবন্ধন**
বাউল গান আমাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি আধ্যাত্মিকতা ও মানবপ্রেমের কথা বলে। কিন্তু আবুল সরকারের মতো দু’চারজনের ভুলের জন্য যেন পুরো বাউল সম্প্রদায়কে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। একইসাথে, শিল্পচর্চার নামে যেন কোনোভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা না হয়, সেটি নিশ্চিত করাও সকলের দায়িত্ব।
আমরা আশা করি, আবুল সরকারের মামলার যথাযথ বিচার হবে। একইসাথে শিল্প ও ধর্মের মধ্যে যেন সুসম্পর্ক বজায় থাকে, এবং কেউ যেন অন্যের বিশ্বাসে আঘাত না হানে, সেই বার্তাটাই সালমা তার বক্তব্যের মাধ্যমে দিয়েছেন। কারণ সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে কোন অপব্যাখ্যা বা কটূক্তি কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর বান্দারা সত্যিই চুপ থাকবে না।



