রাস্তাঘাটের বেহাল দশা আমাদের নিত্যদিনের অভিযোগের বিষয়। কিন্তু সেই অভিযোগ যখন দীর্ঘদিনের অবহেলায় ক্ষোভে পরিণত হয়, তখন প্রতিবাদের ভাষা বদলে যায়। কুমিল্লার দেবিদ্বারে এমনই এক অভিনব প্রতিবাদের সাক্ষী হলো এলাকাবাসী। সড়কের গর্ত আর খানাখন্দ সংস্কারের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ যা করলেন, তা সত্যিই নজর কাড়ার মতো। তিনি সড়কের খানাখন্দে ভরা গর্তে মাছের পোনা ছেড়ে দিয়ে এক প্রতীকী প্রতিবাদ গড়ে তুললেন।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে দেবিদ্বার উপজেলার কাচিশাইর বাজারের সামনে দেবিদ্বার-চান্দিনা সড়কে এই ব্যতিক্রমী ঘটনাটি ঘটে। সাধারণত আমরা দেখি মানববন্ধন বা বিক্ষোভের মতো প্রতিবাদ, কিন্তু সড়কের গর্তে মাছের পোনা ছেড়ে দেওয়া— এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। হাসনাত আবদুল্লাহর এই প্রতিবাদের নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ আর প্রশাসনিক অবহেলা।
এই প্রতিবাদের সময় ক্ষুব্ধ হাসনাত আবদুল্লাহর কথাগুলো ছিল সমাজের প্রতি এক তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ এবং কর্তৃপক্ষের প্রতি এক স্পষ্ট বার্তা। তিনি বলেন, “এই রাস্তায় মানুষ আসা যাওয়া করে, কয়েক দিন আগে এই রাস্তায় একটা ছেলে মারা গেছে। রাস্তা ঠিক না করলে তার চেয়ে ভালো রাস্তায় মাছের চাষ করুন। মাছ চাষ করলে মানুষ অন্তত কিছু মাছ খেতে পারবেন।”
তার বক্তব্যে ফুটে ওঠে তীব্র হতাশা: “দেবিদ্বারের রাস্তাঘাট এতটাই খারাপ অবস্থা যে মাছ ছেড়ে দিয়ে চাষ করার মতো। এখানে আপনারা জিয়ল মাছ ছাড়বেন। আমি মাছ ছাড়ছি, আপনারাও ছাড়বেন, তাতে যদি কিছু হয়।” হাসনাতের এই কথাগুলো কেবল একজন ব্যক্তির ক্ষোভ নয়, এটি হাজারো ভুক্তভোগী মানুষের নীরব আর্তনাদ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দেবিদ্বার-চান্দিনা সড়কটি এখন চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ককে যুক্ত করা এই ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি এলাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কটি ভেঙে বড় বড় গর্তে ভরে গেছে, যা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, যার মধ্যে প্রাণহানির ঘটনাও আছে। ভাঙা আর বড় বড় গর্তের সড়কটি অতিক্রম করতে গিয়ে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সময় লাগছে অনেক বেশি, যানবাহনের ক্ষতি হচ্ছে এবং নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
হাসনাত আবদুল্লাহর এই প্রতিবাদ নিছকই মাছ ছাড়া ছিল না, ছিল কর্তৃপক্ষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার এক সাহসী প্রচেষ্টা। তিনি হয়তো একটি প্রতীকী বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, যদি সড়ক মেরামত না-ই করা যায়, তবে এটিকে অন্তত অন্য কোনো কাজে লাগানো হোক। আমরা আশা করি, এই অভিনব প্রতিবাদ স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়াবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে দেবিদ্বার-চান্দিনা সড়কটি সংস্কার করে যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘব করা হবে। সড়কের নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার, যা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
আপনারা কী মনে করেন, সড়কের এমন বেহাল দশা নিরসনে এমন অভিনব প্রতিবাদ কতটা কার্যকর? কমেন্ট করে জানান আপনার মতামত।



