রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল, জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের চিকিৎসার এক গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল, আজ এক গভীর সংকটের মুখোমুখি। হাসপাতালটির মেডিসিন ও কার্ডিওলজি, যা যেকোনো জেলা হাসপাতালের জন্য প্রাণস্বরূপ এবং রোগীদের জীবন রক্ষায় অপরিহার্য, সেই দুটি বিভাগেই গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এর ফলে জটিল রোগীদের চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং জেলার স্বাস্থ্যসেবার মান চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
**কেন মেডিসিন ও কার্ডিওলজি এত গুরুত্বপূর্ণ?**
হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার ও পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন জটিলতা – এই সবকিছুই মেডিসিন ও কার্ডিওলজি বিভাগের আওতাধীন। একটি জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে যেখানে সাধারণ মানুষের প্রাথমিক ও জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য আসে, সেখানে এই দুটি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকা অত্যাবশ্যক। কিন্তু রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে এই জরুরি বিভাগ দুটি সম্পূর্ণ চিকিৎসকশূন্য অবস্থায় চলায় সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
**রোগীদের ভোগান্তি ও রেফার্ড রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি**
মেডিসিন ও কার্ডিওলজি বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় প্রতিদিন জটিল রোগীদের সঠিক চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, প্রতিদিনই আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে রেফার্ড রোগীর সংখ্যা। বহু রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য জেলায় পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকরা। যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের একটি বড় অংশই মেডিসিন ও কার্ডিওলজি বিভাগের রোগী হওয়া সত্ত্বেও বাধ্য হচ্ছেন সার্জারি, অ্যানেসথেসিয়া, গাইনিসহ অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হতে। এই অবস্থা একদিকে যেমন অন্য বিভাগের চিকিৎসকদের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করছে, তেমনি রোগীদের সঠিক ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেতেও বাধা দিচ্ছে। এটি শুধুমাত্র চিকিৎসকদের নৈতিক দায়বদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ করছে না, বরং রোগীদের জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলছে।
**হাসপাতালের চাপ ও অব্যবহৃত নতুন ভবন**
রাজবাড়ী জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র নির্ভরযোগ্য ঠিকানা এই ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল। কাগজে-কলমে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও, প্রতিদিন গড়ে ১৫০-১৭০ জন রোগী ভর্তি থাকেন, যা ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগী সেবা নিতে আসেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে হাসপাতালটির ২৫০ শয্যার নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়েছিল, যা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এখনো সেই নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু হয়নি। যদি ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু থাকত, তাহলে হয়তো এই চাপ কিছুটা কমত। কিন্তু বর্তমান ১০০ শয্যার সীমিত পরিসরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
**একটি জরুরি মানবিক আবেদন**
জেলার সাধারণ মানুষের মৌলিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। অনতিবিলম্বে মেডিসিন ও কার্ডিওলজি বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ন করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের এই সংকট নিরসন করা হোক। পাশাপাশি, দ্রুত ২৫০ শয্যার নতুন ভবনটি চালু করে হাসপাতালের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং আধুনিক চিকিৎসাসেবার সুযোগ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।
আমরা আশা করি, হাসপাতালটি তার পূর্ণ কার্যকারিতা ফিরে পাবে এবং জেলার সাধারণ মানুষ যেন নির্বিঘ্নে সঠিক ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায়, সেই প্রত্যাশাই আমাদের। এই মানবিক সংকটে সরকারের উচ্চমহলের সুদৃষ্টি ও দ্রুত সমাধান কামনা করি।


