## ছুটির দিনে মাংস খাওয়া হলো না বাবা–ছেলের, মর্গে মিলল লাশ
শুক্রবার মানেই ছুটির আমেজ, পরিবারের জন্য ভালো কিছু রান্নার আয়োজন। আবদুর রহিম সাহেবও হয়তো তেমনই এক পরিকল্পনায় তার আদরের ছেলে মেহরাব হোসেন রিমনকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন মাংস কিনতে। কিন্তু কে জানতো, এই সাধারণ কাজটিই তাদের জীবনের শেষ যাত্রায় পরিণত হবে? ভূমিকম্পের আকস্মিকতায় এক ঝলকেই নিভে গেল বাবা-ছেলের জীবন প্রদীপ। মর্গে গিয়ে তাদের নিথর দেহ শনাক্ত করতে হলো স্বজনদের।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট। রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশালের কসাইটুলী এলাকার নয়নের মাংসের দোকানের সামনে হয়তো অন্যদিনের মতোই ভিড় ছিল। আবদুর রহিম (৪৮) ও তার ১২ বছর বয়সী ছেলে মেহরাব হোসেন রিমনও দাঁড়িয়েছিলেন সেই ভিড়ের মধ্যেই। হয়তো ভাবছিলেন, আজ কী রান্না হবে, কী কী কেনা বাকি। ছুটির দিনের সকালটা আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতোই কাটছিল তাদের।
কিন্তু প্রকৃতির নির্মম পরিহাসে, সব হিসেব বদলে গেল এক মুহূর্তেই। হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল চারপাশ। তীব্র ঝাঁকুনিতে মানুষ যখন দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য, তখন কসাইটুলীর সেই ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ল দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিরীহ ক্রেতাদের ওপর। এক নিমেষেই আনন্দের প্রস্তুতি পরিণত হলো বিভীষিকাময় ট্র্যাজেডিতে। এ ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ মোট তিনজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
পরিবারের সদস্যরা যখন আবদুর রহিম ও রিমনের খোঁজ নিতে শুরু করলেন, তখন দেখলেন দুজনেরই মুঠোফোন বন্ধ। ভূমিকম্পের খবরের সাথে এই ফোন বন্ধ থাকার বিষয়টি তাদের মনে সন্দেহ জাগায়। আশঙ্কায় বুক দুরু দুরু করছিল তাদের। অজানা আশঙ্কায় ছুটে গেলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে। আর সেখানেই মিলল সেই ভয়াবহ সত্য। একে অপরের হাত ধরে না হলেও, একই মর্গে পাশাপাশি পড়ে ছিল বাবা-ছেলের নিথর দেহ। পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়লেও, তাদের চিনতে ভুল হয়নি।
জীবন কতটা অনিশ্চিত, আর ভাগ্য কতটা নির্মম হতে পারে, তার এক মর্মান্তিক উদাহরণ হয়ে রইল এই ঘটনা। ছুটির দিনে মাংস কিনে পরিবারের সাথে একটি আনন্দময় দিন কাটানোর স্বপ্ন নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন আবদুর রহিম ও রিমন। সেই স্বপ্ন অপূর্ণই রয়ে গেল। মাংস কেনা হলো না, পরিবারের সদস্যদের সাথে বসে একবেলা খাওয়াও হলো না। শুধু রয়ে গেল এক বুক চাপা কষ্ট আর প্রকৃতির এই নিষ্ঠুর আঘাতের এক করুণ স্মৃতি।
আল্লাহ তাদের পরিবারকে এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার শক্তি দিন।



