**ভোলায় সফররত তিন উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করে স্থানীয়দের বিক্ষোভ: সেতু নির্মাণসহ ৫ দফা দাবিতে উত্তাল জনতা**
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা ভোলা, উন্নয়নের গতিপথ থেকে যেন অনেকটাই পিছিয়ে। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, অবহেলা আর যোগাযোগ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা নিয়ে এখানকার মানুষের মনে জমে আছে একরাশ ক্ষোভ। আর সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো সম্প্রতি এক নজিরবিহীন ঘটনার মধ্য দিয়ে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনজন উপদেষ্টাকে ভোলা জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ‘আমরা-ভোলাবাসী’ নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা। তাদের মূল দাবি ছিল ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণ। এই ঘটনা শুধু ভোলায় নয়, দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি কতটা গুরুত্ব বহন করে, তা আবার সামনে এসেছে।
**ঘটনার বিস্তারিত:**
ভোলা সফরে এসেছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন উপদেষ্টা। তাদের সফরের উদ্দেশ্য ছিল এলাকার উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময়। তবে ভোলা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে তাদের আগমন ঘটতেই এক ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। ‘আমরা-ভোলাবাসী’ নামের একটি স্থানীয় সংগঠনের ব্যানারে শত শত মানুষ উপদেষ্টাদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন। তারা উপদেষ্টাদের গাড়ি সামনে এগোতে দেননি, যার ফলে উপদেষ্টারা দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা জানান, শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল উপদেষ্টাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং তাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিগুলো পৌঁছে দেওয়া। তাদের এই প্রতিবাদের ভাষা ছিল দৃঢ়, কিন্তু শান্তিপূর্ণ।
**দাবিগুলো কী ছিল?**
বিক্ষোভকারীদের মূল ও প্রধান দাবি ছিল স্বপ্নের ‘ভোলা-বরিশাল সেতু’ নির্মাণ। যুগ যুগ ধরে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন ভোলা জেলা বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন। এই সেতু নির্মিত হলে ভোলা শুধু মূল ভূখণ্ডের সঙ্গেই যুক্ত হবে না, বরং এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনযাত্রায় আসবে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কৃষি, মৎস্য, পর্যটন ও শিল্প খাতে খুলে যাবে উন্নয়নের নতুন দুয়ার। পণ্য পরিবহন সহজ হবে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হবে এবং মানুষের যাতায়াত কষ্ট লাঘব হবে।
এছাড়াও, তাদের আরও চারটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল, যা সম্মিলিতভাবে ‘৫ দফা দাবি’ হিসেবে পরিচিত। যদিও সুনির্দিষ্টভাবে সকল দাবি উল্লেখ করা হয়নি, তবে সাধারণত ভোলাবাসীর প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. গ্যাসভিত্তিক শিল্প কারখানা স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
২. পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা।
৩. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ ও সংরক্ষণাগার নির্মাণ।
৪. উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার আধুনিকীকরণ।
‘আমরা-ভোলাবাসী’ একটি স্থানীয় সংগঠন, যারা ভোলা জেলার বিভিন্ন সমস্যা ও দাবিদাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো ভোলাবাসীর কণ্ঠস্বরকে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া এবং এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা। উপদেষ্টাদের উপস্থিতিতে এমন একটি সাহসী ও নজিরবিহীন বিক্ষোভের আয়োজন করে তারা প্রমাণ করেছে যে ভোলাবাসীর দাবিগুলো কতটা জরুরি এবং তারা কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
উপদেষ্টাদের অবরুদ্ধ করে স্থানীয়দের এই বিক্ষোভ ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, বঞ্চনা ও প্রতিবাদের এক সুস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি। এটি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং স্থানীয় জনগণের ক্ষমতায়ন এবং তাদের মৌলিক অধিকার ও উন্নয়নের দাবির জোরদার বহিঃপ্রকাশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য এটি একটি বার্তা যে, দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের সমস্যার প্রতি সংবেদনশীল হওয়া এবং তাদের ন্যায্য দাবিগুলো দ্রুত পূরণ করা কতটা জরুরি। আশা করা যায়, এই বিক্ষোভের মাধ্যমে ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, বিশেষ করে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে গুরুত্ব পাবে এবং দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।



