শুক্রবার, ২১ নভেম্বর দুপুর। দেশের একটি বিশাল অংশ কেঁপে উঠেছিল এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে। হঠাৎ করে আসা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, অনেকেই আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েন। মাটির নিচে থেকে উঠে আসা প্রলয়ংকরী কম্পন মুহূর্তেই মানুষের মনে গেঁথে যায় এক চরম অভিজ্ঞতার স্মৃতি। এই ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভেসে যায় মানুষের ব্যক্তিগত অনুভূতি আর অভিজ্ঞতার বর্ণনায়।
এই তীব্র ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেসবুকে নিজের অনুভূতি জানান উপদেষ্টা ফারুকী। তার লেখায় উঠে আসে সেই মুহূর্তের ভয়াবহতা এবং প্রকৃতির সামনে মানুষের অসহায়ত্ব। তিনি লেখেন:
“এমন ভূমিকম্প আগে কখনও অনুভব করিনি! হয়তো এটাই শেষ দিন হতে পারতো। সবকিছু কতটা ভঙ্গুর, তা মনে করিয়ে দেয়!”
উপদেষ্টা ফারুকীর এই কথাগুলো কেবল তার ব্যক্তিগত উপলব্ধি ছিল না, বরং সেদিন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের মনের কথা হয়ে উঠেছিল। অনেকেই একই ধরনের তীব্রতা অনুভব করেছেন এবং প্রকৃতির এই অমোঘ শক্তির সামনে নিজেদের তুচ্ছতা উপলব্ধি করেছেন।
শুধু সাধারণ মানুষ নয়, ভূমি বিশেষজ্ঞরাও উপদেষ্টা ফারুকীর এই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তাদের মতে, দেশের অভ্যন্তরে এত শক্তিশালী ভূমিকম্প এর আগে খুব কমই দেখা গেছে। এই কম্পন ছিল এতটাই তীব্র যে, ভূতাত্ত্বিকরা পর্যন্ত এর ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতারের মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন:
“বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় কম্পন এটি। মাটির ওপর কম্পনের তীব্রতা ছিল অত্যন্ত বেশি।”
অধ্যাপক হুমায়ুন আখতারের এই বক্তব্য ভূমিকম্পটির ভয়াবহতা এবং এর ভূতাত্ত্বিক গুরুত্বকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরে। তার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এটি শুধু একটি সাধারণ কম্পন ছিল না, বরং বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে এমন এক ভূকম্পন। মাটির ওপর এর তীব্র প্রভাব দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুভূত হয়েছে, যা অনেক মানুষের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।
এই ভূমিকম্প আবারও আমাদের স্মরণ করিয়ে দিল যে, প্রকৃতির কাছে আমরা কতটা অসহায়। এক মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু তছনছ হয়ে যেতে পারে। আমাদের জীবন, আমাদের প্রিয়জন, আমাদের তৈরি করা স্থাপনা – সবকিছুই যে কতটা ভঙ্গুর, তা এই কম্পন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি কতটা, তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। আমাদের ভবনগুলোর কাঠামোগত নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
উপদেষ্টা ফারুকীর ব্যক্তিগত উপলব্ধি এবং ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতারের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ – উভয়ই ২১ নভেম্বরের এই ভূমিকম্পকে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই কম্পন শুধু মাটিকে নয়, আমাদের মনকেও নাড়িয়ে দিয়ে গেছে, মনে করিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির শক্তির সামনে মানুষের সীমাবদ্ধতা এবং প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা।
—



