## বিশ্বকাপে ভালো করলেই হবে— চাওয়া লিটনের
বাংলাদেশের ক্রিকেট মানেই যেন এক নাটকীয়তা। কখনো অবিশ্বাস্য জয়, কখনো অপ্রত্যাশিত হার— এই দোলাচলই যেন টাইগারদের সঙ্গী। সম্প্রতি শেষ হওয়া আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি ছিল এমনই এক নাটকীয়তার দারুণ উদাহরণ। প্রথম ম্যাচেই অনভিজ্ঞ আয়ারল্যান্ডের কাছে অপ্রত্যাশিত হার, যা অনেককেই অবাক করেছিল। তবে টাইগাররা ঘুরে দাঁড়িয়েছে দারুণভাবে, পরের দুই ম্যাচ জিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ পকেটে পুরেছে।
কিন্তু সিরিজ জয়ের এই উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই টাইগারদের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাস এক ভিন্ন ইঙ্গিত দিলেন। তার চোখে, এই জয় কেবলই প্রস্তুতির অংশ, আসল লক্ষ্য অনেক বড়। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ম্যাচ জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে লিটন স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “বিশ্বকাপে ভালো করলেই হবে— এটাই এখন আমাদের মূল চাওয়া।”
**আয়ারল্যান্ড সিরিজ: ভুল থেকে শেখার মঞ্চ**
আয়ারল্যান্ড সিরিজটা ছিল বাংলাদেশের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও প্রতিপক্ষকে খুব শক্তিশালী বলা যাবে না, তবুও প্রথম ম্যাচে তাদের কাছে ৬ উইকেটে হার বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসে কিছুটা চিড় ধরিয়েছিল। তবে এরপরই দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে দাপুটে জয় প্রমাণ করে দিয়েছে, দল ভুল থেকে শিখতে প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে। বিশেষ করে ব্যাটারদের দায়িত্বশীল ব্যাটিং এবং বোলারদের নিয়ন্ত্রিত স্পেল শেষ দুই ম্যাচে জয়ের পথ খুলে দিয়েছে। এই সিরিজ জয় নিঃসন্দেহে দলের মনোবল বাড়িয়েছে এবং বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার একটি ভালো সুযোগ করে দিয়েছে।
**লিটনের চোখ বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে**
অধিনায়ক লিটনের এই বক্তব্য কিন্তু হুট করে আসেনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের দীর্ঘদিনের এক অপ্রাপ্তির নাম বিশ্ব আসরে ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্স। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে টাইগাররা প্রায়শই নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিলেও, যখনই বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে আসে, চাপ সামলাতে ব্যর্থ হয়। লিটন সম্ভবত সেই বাস্তবতাকেই সামনে এনেছেন। তার মতে, সিরিজ জয় জরুরি হলেও, মূল ফোকাস থাকা উচিত বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার দিকে।
লিটন আরও বলেন, “আমাদের প্রস্তুতিটা ঠিকঠাক হচ্ছে। এই সিরিজ থেকে আমরা অনেক ইতিবাচক দিক পেয়েছি, কিন্তু এইটুকুতে সন্তুষ্ট হলে চলবে না। সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ আসছে। বিশ্বকাপে ভালো খেলতে হলে আমাদের ভুলগুলো শুধরে নিতে হবে এবং আরও আগ্রাসী মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে হবে।”
**আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ এবং প্রস্তুতি**
লিটনের এই চাওয়া দলের জন্য একটি সুস্পষ্ট বার্তা বহন করে। আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে হাতে আর বেশি সময় নেই। প্রতিটি ম্যাচ, প্রতিটি অনুশীলন সেশনকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে দেখতে হবে। দল এখন আত্মবিশ্বাসী, তবে এই আত্মবিশ্বাসকে অহংকারে পরিণত হতে দিলে চলবে না। দলীয় সংহতি, সঠিক পরিকল্পনা এবং চাপের মুখে পারফর্ম করার মানসিকতা— এই বিষয়গুলোর ওপর জোর দিতে হবে। বিশেষ করে ব্যাটিং অর্ডারের স্থিতিশীলতা, ডেথ ওভারে বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে আরও উন্নতি আনা জরুরি।
বিশ্বকাপে ভালো করলেই হবে— লিটনের এই মন্তব্য কেবল তার ব্যক্তিগত চাওয়া নয়, এটি কোটি বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীর প্রাণের কথা। আশা করা যায়, তার নেতৃত্বে দল সঠিক পথে এগোবে এবং আসন্ন বিশ্বকাপে প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে। কারণ, দেশের মানুষ সিরিজ জয়ের উল্লাস ভুলে যেতে রাজি, যদি বিশ্ব আসরে টাইগাররা জ্বলে ওঠে নিজেদের সেরাটা দিয়ে।



