বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে, তখন বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং তাদের সাম্প্রতিক ঘোষণা দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
**আশার আলো: $1.5 বিলিয়ন বিনিয়োগের পাইপলাইন**
বিডা জানিয়েছে যে, বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন, আউটরিচ মিশন, রোডশো এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদল ভিজিটের মতো সুচিন্তিত কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা $১.৫ বিলিয়ন সম্ভাব্য বিনিয়োগের একটি শক্তিশালী ‘পাইপলাইন’ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত বিভিন্ন বিনিয়োগকারী এই তালিকার অধীনে বিনিয়োগের ইচ্ছা নিবন্ধন করেছেন, যা দেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনার প্রতি তাদের ক্রমবর্ধমান আস্থারই প্রতিফলন।
শুধু এই পাইপলাইনই নয়, বিডার কাছে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে আরও $২.৮ বিলিয়ন অতিরিক্ত বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এই বিপুল পরিমাণ সম্ভাব্য বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে এক বিশাল সুযোগ তৈরি করবে। বিডা প্রতিটি প্রকল্পকে অত্যন্ত কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে, যাতে শুধু কাগজে-কলমে থাকা এই ইচ্ছাগুলো বাস্তবে রূপ নিতে পারে।
**একটি সংস্কৃতি পরিবর্তনের সূচনা**
বিডার এই সাফল্যকে কেবল সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে ভুল হবে। বিডার নির্বাহী সদস্য ও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট হেড নাহিয়ান রহমান রোচি এই প্রাথমিক ফলাফলকে ‘একটি সংস্কৃতি পরিবর্তনের শুরু’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই ২০২৬ সালের জন্য অগ্রাধিকার নির্ধারণ শুরু করেছি।” এই উক্তিটি বিডার দূরদর্শী চিন্তাভাবনা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির প্রতি তাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। এর মানে হলো, বিডা কেবল বর্তমান সাফল্যের দিকেই তাকিয়ে নেই, বরং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাগুলোকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে।
**বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫: বিনিয়োগকারীদের মিলনমেলা**
এই বিনিয়োগ আকর্ষণের একটি বড় প্ল্যাটফর্ম ছিল এ বছরের এপ্রিল মাসে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’। এই সম্মেলনে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়। ৫০টি দেশ থেকে ৪১৫ জন বিদেশি প্রতিনিধি এবং প্রায় ২,৫০০ জন স্থানীয় বিনিয়োগকারী এতে অংশগ্রহণ করেন, যা দেশের বিনিয়োগ পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহের এক সুস্পষ্ট প্রমাণ।
সম্মেলনের আলোচনা সভায় শক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি, ডিজিটাল ইকোনমি এবং স্বাস্থ্যখাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। একই সময়ে, বিনিয়োগকারীদের এবং দেশীয় অংশীদারদের মধ্যে সরাসরি আলোচনা সহজ করতে আয়োজন করা হয়েছিল ‘ম্যাচমেকিং ইভেন্ট’, যা সম্ভাব্য অংশীদারিত্বের পথ খুলে দিয়েছে এবং বিনিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করেছে।
**ভবিষ্যতের পথরেখা**
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক নতুন দিগন্তে। বিডার মতো প্রতিষ্ঠানের সুপরিকল্পিত ও কার্যকর পদক্ষেপগুলো বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং স্থানীয় শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই $১.৫ বিলিয়ন পাইপলাইন কেবল একটি সংখ্যা নয়, এটি বাংলাদেশের উজ্জ্বল অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের এক প্রতিচ্ছবি। আমরা আশা করি, এই বিনিয়োগগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হবে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে, যা লাখো মানুষের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি এবং বিনিয়োগকারীদের পথ সুগম করার ক্ষেত্রে বিডার এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।



