## খাগড়াছড়ির মহালছড়ি বাজারে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুটি স্বর্ণের দোকানসহ মোট ২৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ভস্মীভূত: এক দুঃস্বপ্নময় রাত!
মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি। গতরাতে হঠাৎ নেমে আসা এক ভয়াবহ দুর্যোগে কেঁপে উঠলো মহালছড়ি বাজার। এক নজিরবিহীন অগ্নিকাণ্ডে দুটি স্বর্ণের দোকানসহ মোট ২৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত হয়ে গেছে, যা এলাকার ব্যবসায়ী মহলে ও সাধারণ মানুষের মনে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। এই অগ্নিকাণ্ড একদিকে যেমন বিপুল আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছে, তেমনি বহু মানুষের জীবিকা ও স্বপ্ন এক লহমায় কেড়ে নিয়েছে।
**কী ঘটেছিল সেই দুঃস্বপ্নময় রাতে?**
জানা যায়, গত রাতে আনুমানিক রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে মহালছড়ি বাজারের একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা বাজারের কাঠের কাঠামো এবং দাহ্য পদার্থে ভরা অন্যান্য দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, আশেপাশের এলাকাতেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও আগুন নেভানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু বাজারের সরু গলি এবং দোকানগুলোতে প্রচুর দাহ্য পদার্থের উপস্থিতির কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। দীর্ঘ প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টার পর অবশেষে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে।
**ক্ষতির পরিমাণ ও প্রভাব**
এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বাজারের মোট ২৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এর মধ্যে ছিল দুটি মূল্যবান স্বর্ণের দোকান, কাপড়ের দোকান, কসমেটিকসের দোকান, মুদির দোকান এবং আরও বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
তবে এর চেয়েও বড় ক্ষতি হলো, এসব দোকানের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর স্বপ্ন ও জীবিকা এক লহমায় কেড়ে নেওয়া। ঈদ সামনে রেখে অনেক ব্যবসায়ীই নতুন করে পণ্য তুলেছিলেন, যার পুরোটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এই অপ্রত্যাশিত ক্ষতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখন দিশেহারা; কীভাবে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াবেন, সেই ভাবনা তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে।
**ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এবং করণীয়**
মহালছড়ির এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড শুধু একটি বাজারের ক্ষতি নয়, এটি একটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডে আঘাত। যেসব ব্যবসায়ী তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন, তাদের এখন প্রয়োজন জরুরি সাহায্য ও সহযোগিতা। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা না গেলে, এই কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কীভাবে হলো, তা জানতে ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুতই এর কারণ উদ্ঘাটিত হবে এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্যোগ এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।
এই কঠিন সময়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আশা করি, দ্রুতই তারা এই শোক কাটিয়ে উঠে আবারও নতুন উদ্যমে তাদের জীবন ও জীবিকা শুরু করতে পারবেন। আসুন, আমরা সকলে মিলে তাদের পাশে দাঁড়াই এবং এই কঠিন সময়ে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করি।
—



