ববি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ, দাবি বিসিএস পরীক্ষার সময় বৃদ্ধি**
সম্প্রতি বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা থেকে জন্ম নেওয়া এই অবরোধ, সাধারণ যাত্রীদের সাময়িক দুর্ভোগের কারণ হলেও, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি সমাজের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তাদের মূল দাবি, ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধি করা।
**কেন এই অবরোধ?**
প্রশ্ন আসতে পারে, শিক্ষার্থীরা কেন হঠাৎ এমন কঠোর আন্দোলনে নামলো? এর মূলে রয়েছে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম বড় সমস্যা – সেশনজট এবং করোনা মহামারির দীর্ঘকালীন প্রভাব। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি, করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট দীর্ঘ সেশনজটের ফলে তাদের একাডেমিক ক্যালেন্ডার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থীই তাদের স্নাতক শেষ করতে পারেননি বা শেষ করলেও চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার পর্যাপ্ত সময় পাননি।
সরকারি চাকরির স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ হলো বিসিএস পরীক্ষা। কিন্তু চলমান ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময়সীমা তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সেশনজটের কারণে অনেকেরই বয়সসীমা পার হয়ে যাচ্ছে অথবা খুব দ্রুতই পার হয়ে যাবে। এই অবস্থায় আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধি না করা হলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্নপূরণের এই প্রথম সুযোগ থেকেই বঞ্চিত হবেন।
**আন্দোলনের চিত্র**
গত [তারিখ উল্লেখ করা যেতে পারে, যদি সুনির্দিষ্ট হয়, অন্যথায় ‘সম্প্রতি’ ব্যবহার করাই ভালো] ববি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে শুরু করেন। ‘আমাদের দাবি মানতে হবে’, ‘শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি বন্ধ করো’ – এমন সব স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলা এই অবরোধের ফলে মহাসড়কের দু’পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, যা সাধারণ যাত্রী ও পথচারীদের চরম ভোগান্তিতে ফেলে। তবে শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে ছিল নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে একরাশ হতাশা এবং দাবি আদায়ের দৃঢ় সংকল্প।
বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনে শিক্ষক ও প্রশাসনের সহানুভূতিও চেয়েছেন। তাদের দাবি, কর্তৃপক্ষ যেন শিক্ষার্থীদের এই সংকটময় পরিস্থিতি অনুধাবন করে সরকারের উচ্চ মহলে বিষয়টি তুলে ধরে।
**এক জাতীয় সমস্যা**
ববি শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন শুধু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নয়। এটি দেশের অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিচ্ছবি। করোনা মহামারি শিক্ষাব্যবস্থার যে ক্ষতি করেছে, তার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী। সেশনজট, কর্মসংস্থান সংকট – এই সবকিছুই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গভীর হতাশার জন্ম দিচ্ছে। বিসিএস পরীক্ষা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি পরম আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন। এটি শুধু একটি চাকরি নয়, এটি সামাজিক মর্যাদা ও একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যতের প্রতীক।
তাই, যখন সেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ বয়সসীমা বা নির্ধারিত সময়সীমার বেড়াজালে আটকে যায়, তখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন আন্দোলন দানা বাঁধা অস্বাভাবিক নয়। তাদের এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া সরকারের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
**কর্তৃপক্ষের করণীয়**
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সরকারি কর্ম কমিশনের (PSC) উচিত দ্রুত এই বিষয়টি নিয়ে একটি সুরাহা করা। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হলে অসংখ্য শিক্ষার্থীর স্বপ্ন বাঁচবে। এর ফলে দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধাররা মানসিক শান্তি নিয়ে তাদের প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে পারবেন।
আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক দাবিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন এবং দ্রুত একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা দূর করবেন। দেশের এই তরুণ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধা ও পরিশ্রম যেন কোনো প্রতিকূলতার কারণে বৃথা না যায়, তা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
—



