অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া প্রায় সাত বছর পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে গেলেন। বুধবার (৮ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জিয়া উদ্যানে তিনি দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া করেন।
জানা যায়, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার পর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে রওনা হন খালেদা জিয়া। তার এই সফরের তথ্য নিশ্চিত করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হওয়ার আগে সবশেষ তিনি জিয়াউর রহমানের সমাধি জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন। সেই থেকে দীর্ঘ এই সময়টিতে তার রাজনৈতিক জীবন যেমন স্থবির ছিল, তেমনি ব্যক্তিগতভাবেও তিনি ছিলেন নানাবিধ বিধিনিষেধের বেড়াজালে আবদ্ধ। প্রথমে কারাগার, তারপর সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়ে নিজ বাসভবন ‘ফিরোজা’তে কাটছে তার জীবন।
৫ আগস্টের পর এই প্রথম পারিবারিক বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজের বাইরে বাসা থেকে বের হলেন বিএনপি প্রধান, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এতদিন মূলত শারীরিক অসুস্থতা এবং চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাকে প্রকাশ্য জনজীবন থেকে দূরে রেখেছিল। তবে এবার তিনি ব্যক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সফরে বের হলেন।
দীর্ঘদিনের বিরতির পর প্রিয় স্বামীর সমাধিতে এসে তিনি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তার রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেন। এই আগমনকে ঘিরে জিয়া উদ্যানে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক জড়ো হন। তারা তাদের প্রিয় নেত্রীকে এক ঝলক দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন এবং তার আগমনে স্লোগান ও করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানান।
খালেদা জিয়ার এই আগমন কেবল একটি ব্যক্তিগত জিয়ারতই নয়, বরং এটি তার সমর্থকদের মাঝে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। এটি একটি বার্তা বহন করে যে, দীর্ঘ অসুস্থতা ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি মানসিকভাবে দৃঢ় আছেন। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যখন বিএনপি এক কঠিন সময় পার করছে, তখন দলীয় প্রধানের এমন একটি পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।
প্রায় সাত বছর পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি একাধারে আবেগঘন এবং রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। এটি কেবল একজন স্ত্রীর তার প্রয়াত স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনই নয়, বরং একজন রাজনৈতিক নেত্রীর তার দলের প্রতিষ্ঠাতার প্রতি আদর্শিক আনুগত্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা।



