বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সম্প্রতি ভারতের বিরুদ্ধে এক গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন, যা রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অবয়বকে অসুরের মূর্তি বানিয়ে ভারত যে নিম্নরুচির পরিচয় দিয়েছে, তা বিস্ময়কর। রিজভীর মতে, এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশটির রাজনীতিতে একটি অন্ধকার যুগ শুরু হয়েছে।
শনিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর বনানীতে ঢাকা গ্যালারিতে ‘লবেলিয়া’ চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সাধারণত, ভারত তার সমৃদ্ধ সঙ্গীত, শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এমন একটি দেশ, যারা শিল্প ও সংস্কৃতির চর্চায় অগ্রগণ্য, তাদের পক্ষ থেকে এমন রুচিহীন কাজ অপ্রত্যাশিত বলেই মনে করেন রিজভী। তিনি বলেন, “আমরা শুনেছি ভারতে সঙ্গীত, শিল্পকলার চর্চা হয়। সেই দেশ এমন নিম্নরুচির পরিচয় দেবে তা আমরা কল্পনা করিনি।” এই মন্তব্য ভারতের সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং রাজনৈতিক আচরণের মধ্যে এক গভীর বৈপরীত্য তুলে ধরেছে। একজন আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব, যিনি নোবেল বিজয়ী, তার মুখাবয়বকে এমন নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা নিয়ে রিজভী তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
শুধু ভারতের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে মন্তব্য করেই রিজভী থেমে থাকেননি। তিনি একই সাথে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরির অনেক চেষ্টা হলেও এদেশের জনগণ সকল ষড়যন্ত্রকে সফলভাবে প্রতিহত করেছে। এর ফলস্বরূপ, এবারের দুর্গাপূজা সারাদেশে নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এটি দেশের মানুষের সম্প্রীতি ও ঐক্যবদ্ধতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মনে করেন তিনি। এই বক্তব্যের মাধ্যমে রিজভী একদিকে যেমন বহিরাগত সংস্কৃতির আক্রমণাত্মক দিক তুলে ধরেছেন, তেমনি দেশের মানুষের নিজস্ব সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রশংসা করেছেন।
আলোচনা প্রসঙ্গে রিজভী ‘৫ আগস্টের পরাজিত শক্তি’দের বিষয়েও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এই পরাজিত শক্তিরা পার্শ্ববর্তী দেশের শিল্প সাহিত্যের প্রসার করতে চেয়েছিল। এই মন্তব্য একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ঘটনার ইঙ্গিত দেয়, যেখানে একটি পক্ষ দেশের অভ্যন্তরে প্রতিবেশী দেশের সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়েছিল বলে রিজভী অভিযোগ করেন। এই বিষয়টি আঞ্চলিক রাজনীতি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে একটি স্পর্শকাতর প্রশ্ন তৈরি করে।
রুহুল কবির রিজভীর এই বক্তব্য ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন আলোচনার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তিত্বকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং ভারতের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ‘অন্ধকার যুগের’ ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তখন এই মন্তব্যের গভীরতা ও তাৎপর্য আরও বেশি গুরুত্ব বহন করে।


