পূজাকে ‘শয়তানের ইবাদত’ আখ্যা দেওয়ায় বিএনপি নেতা হারুনের মনোনয়ন বাতিলের দাবি হিন্দু সম্প্রদায়ের
সম্প্রতি এক বিতর্কিত মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজাকে ‘শয়তানের ইবাদত’ আখ্যা দিয়ে তিনি সারা দেশের সনাতন সম্প্রদায়কে গভীরভাবে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ করেছেন। তার এই উক্তির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। একই সঙ্গে হারুনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র বাতিল এবং ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংগঠন দুটি।
**ঘটনার সূত্রপাত:**
ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার (১৫ নভেম্বর) একটি গণসমাবেশে, যেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে হারুনুর রশীদ এমন উসকানিমূলক মন্তব্য করেন। একজন সাবেক সংসদ সদস্য এবং বর্তমান সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েও দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার এই ঘটনাকে অনেকেই রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিপন্থী বলে মনে করছেন। তার এই মন্তব্য সমাজে বিভেদ সৃষ্টির এক ঘৃণ্য প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
**প্রতিবাদ ও দাবিসমূহ:**
হারুনের এই বক্তব্যের প্রতিবাদে রবিবার (১৬ নভেম্বর) রাতে এক যৌথ বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল।
যৌথ বিবৃতিতে সংগঠন দুটির নেতারা স্পষ্ট ভাষায় হারুনের মন্তব্যকে দেশের সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, “হারুনুর রশীদের এই বক্তব্য সারাদেশের সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়কে গভীরভাবে মর্মাহত, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে।” নেতৃবৃন্দ হারুনের এই মন্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান এবং নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তার মনোনয়নপত্র বাতিলের জন্য জোর আবেদন জানান। একই সঙ্গে, ধর্ম অবমাননার দায়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানানো হয়।
**সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর আঘাত:**
বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। দেশের সংবিধানে সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতার মুখে এমন বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি অসম্মান নয়, বরং দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্যও হুমকিস্বরূপ। একজন জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতা হিসেবে হারুনের দায়িত্ব ছিল সকল ধর্মাবলম্বীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং সমাজে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া, কিন্তু তার এই মন্তব্য সম্পূর্ণ বিপরীত ফল বয়ে এনেছে।
**কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান:**
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো এমন বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং জাতিগত ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই, নির্বাচন কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের কাছে এই দাবি জোরালো হচ্ছে যে, হারুনুর রশীদের প্রার্থিতা বাতিল করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং সকল ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন একটি গণতান্ত্রিক সমাজের মূল ভিত্তি। আশা করা যায়, কর্তৃপক্ষ দ্রুত এবং ন্যায়ানুগ পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখবে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করবে। সকল নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে এ ধরনের ঘটনার কঠোর প্রতিরোধ জরুরি।



