**পাকিস্তানের পর এবার ইরানে বিশাল স্বর্ণের খনির সন্ধান**
সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে স্বর্ণ আবিষ্কারের এক নতুন ঢেউ লেগেছে। পাকিস্তানের পর এবার ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে বিশাল স্বর্ণের খনির সন্ধান পাওয়া গেছে, যা দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় স্বর্ণ মজুত বৃদ্ধি ইরানের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।
**ইরানের স্বর্ণের কৌশলগত গুরুত্ব**
ইরান বরাবরই তার জাতীয় স্বর্ণ মজুদের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ প্রকাশে অনিচ্ছুক। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে স্বর্ণ কেনার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদ রেজা ফারজিন জানিয়েছিলেন যে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইরান বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ স্বর্ণ-ক্রয়কারী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম ছিল।
বর্তমানে ইরানে মোট ১৫টি স্বর্ণখনি রয়েছে, যার মধ্যে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জারশোরান খনিটি সবচেয়ে বড়। দীর্ঘমেয়াদী আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক চাপ এবং পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগের কারণে ইরানের অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুর্বল অবস্থায় ছিল। এছাড়া, ইসরায়েল–ইরান সংঘাতের পর পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
ডলারের তুলনায় রিয়ালের ক্রমাগত অবমূল্যায়ন এবং তীব্র মুদ্রাস্ফীতির কারণে অনেক ইরানি স্বর্ণকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে দেখছেন। সোমবার খোলা বাজারে এক ডলারের বিনিময় মূল্য প্রায় ১১ লাখ ৭০ হাজার রিয়াল এবং এক ইউরো প্রায় ১৩ লাখ ৬০ হাজার রিয়াল ছিল, যা মুদ্রার দুর্বলতার এক স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। এমন পরিস্থিতিতে, বিশাল স্বর্ণের খনির সন্ধান ইরানের জন্য এক নতুন অর্থনৈতিক দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
**পাকিস্তানের দৃষ্টান্ত**
ইরানের এই আবিষ্কারের আগে, প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও স্বর্ণের বিশাল মজুত আবিষ্কারের খবর এসেছিল। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের তারবেলা এলাকায় পাওয়া এই মজুতের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৬৩৬ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের সাবেক চেম্বার অফ কমার্স কর্মকর্তা হানিফ গহর জানিয়েছিলেন, এই মজুত দিয়ে দেশটির সমস্ত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব। স্বর্ণ উত্তোলনের জন্য অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ চলছে, এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হবে।
**আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব**
মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার এই দুটি দেশের স্বর্ণ আবিষ্কার আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, নিষেধাজ্ঞা জর্জরিত দেশগুলোর জন্য স্বর্ণ মজুত বৃদ্ধি আত্মনির্ভরশীলতা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকেই চাঙ্গা করবে না, বরং বৈশ্বিক বাণিজ্যে তাদের দর কষাকষির ক্ষমতাও বৃদ্ধি করবে।
সব মিলিয়ে, ইরান ও পাকিস্তানের এই স্বর্ণ আবিষ্কার শুধু তাদের নিজ নিজ দেশের ভাগ্যই বদলাতে পারে না, বরং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। সময়ই বলবে এই বিশাল মজুতগুলো কীভাবে এই দেশগুলোকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।



