## পশ্চিম তীরে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের হত্যাকারী অফিসারকে পদোন্নতি: এক নগ্ন অবিচারের দৃষ্টান্ত
সম্প্রতি ইসরাইল থেকে এমন একটি খবর এসেছে যা মানবিকতা ও ন্যায়বিচারের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। ইসরাইলের বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির সম্প্রতি এমন একজন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছেন, যার ইউনিট অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে দুই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে ঠান্ডা মাথায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য দায়ী। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো গত রোববার (৩০ নভেম্বর) এই খবর জানিয়েছে। এই ঘটনা শুধু ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলের নির্লজ্জ অবজ্ঞা নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের প্রতিও চরম উপহাস।
**জেনিনের মর্মান্তিক অধ্যায়:**
অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলি আগ্রাসনের কেন্দ্রবিন্দু। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই পদোন্নতি, তা ছিল এক মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক অধ্যায়। জানা গেছে, ওই কর্মকর্তার নেতৃত্বাধীন ইউনিট দুই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে, যারা কোনো ধরনের হুমকি সৃষ্টি করছিল না, তাদের ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেছিল। এই ধরনের হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের সমতুল্য। সাধারণত, এমন গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত, কিন্তু এখানে উল্টো চিত্র দেখা গেল। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের হত্যার অভিযোগ উঠলে, খুব কম ক্ষেত্রেই তাদের বিচার হয়, বরং অনেক সময় তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়।
**বেন-গভিরের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত:**
ইতামার বেন-গভির, যিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণকারী এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত, তার এই সিদ্ধান্ত মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও দমন-পীড়নকে প্রকাশ্যে সমর্থনকারী একজন মন্ত্রী যখন একজন অভিযুক্ত হত্যাকারীকে পুরস্কৃত করেন, তখন তা ইসরাইলের বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে আরও একবার উন্মোচন করে দেয়। একজন অফিসারকে তার ইউনিটের এমন নৃশংস কাজের জন্য জবাবদিহি করার পরিবর্তে পদোন্নতি দেওয়া, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরও সহিংসতা ও দমন-পীড়ন চালানোর জন্য একটি সবুজ সংকেত ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা স্পষ্ট যে, ইসরাইলি সরকার ফিলিস্তিনিদের জীবনকে মূল্যহীন মনে করে এবং তাদের মানবাধিকারকে নিয়মিতভাবে লঙ্ঘন করে চলেছে।
**দায়মুক্তির সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন:**
ইসরাইলি দখলদারিত্বের অধীনে ফিলিস্তিনিদের উপর এ ধরনের বর্বরতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু যখন একজন হত্যাকারীকে পুরস্কৃত করা হয়, তখন তা কেবল নৃশংসতার মাত্রা বাড়ায় না, বরং ন্যায়বিচারের সকল ধারণাকে উপহাস করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলের এই দায়মুক্তির সংস্কৃতির সমালোচনা করে আসছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য খুব কমই ইসরাইলি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে দেখা যায়। এই পদোন্নতি প্রমাণ করে যে, ইসরাইলের বর্তমান সরকার এই সমালোচনাকে গুরুত্ব দেয় না এবং বরং এটিকে উৎসাহিত করে। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
**উপসংহার:**
এই ঘটনা শুধু একটি পদোন্নতির খবর নয়, এটি ফিলিস্তিনিদের প্রতি চলমান অবিচার এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ইসরাইলের চরম অবজ্ঞার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। বিশ্বের উচিত এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো এবং ইসরাইলকে তার কাজের জন্য জবাবদিহি করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা। নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের রক্ত যখন পদোন্নতির সিঁড়ি হয়, তখন মানবতার পরাজয় ঘটে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এই ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া অত্যাবশ্যক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন জঘন্য অপরাধ করে পুরস্কারের আশা করতে না পারে।



