## তিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের বিপুল জয়, প্রথম পরীক্ষায় হারলেন ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম বড় রাজনৈতিক পরীক্ষায় রিপাবলিকান পার্টিকে কঠিন হারের সম্মুখীন হতে হয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা অপ্রত্যাশিতভাবে বিপুল জয়লাভ করে, যা মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন মোড় এনে দিয়েছে। এই ফলাফল শুধু ডেমোক্র্যাটদের মনোবলই বাড়ায়নি, বরং ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রিপাবলিকান এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য এক স্পষ্ট সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
**নীল ঢেউয়ের আগমন: তিন রাজ্যে ডেমোক্র্যাটদের বিজয়**
প্রথমত, ভার্জিনিয়া এবং নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীরা বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন।
1. **ভার্জিনিয়া:** অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সুইং স্টেটটিতে ডেমোক্র্যাট রাল্ফ নর্থাম রিপাবলিকান এড গিললেস্পিকে পরাজিত করে গভর্নর নির্বাচিত হন। নর্থামের জয়ের ব্যবধান ছিল অপ্রত্যাশিতভাবে বড়, যা ইঙ্গিত দেয় যে ট্রাম্পের নীতি এবং বাগ্মিতা ভার্জিনিয়ার ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে গিললেস্পি ট্রাম্পের কড়া অভিবাসন নীতি এবং বর্ণবাদী বক্তব্যের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, যা তার পরাজয়ের কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
2. **নিউ জার্সি:** এখানেও ডেমোক্র্যাট ফিল মারফি সহজেই রিপাবলিকান প্রার্থী কিম গুয়াডাগনোকে পরাজিত করে গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন। নিউ জার্সিতে রিপাবলিকান গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টির জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকায় ডেমোক্র্যাটদের জন্য পথ সহজ হলেও, মারফির নিরঙ্কুশ জয় ডেমোক্র্যাটদের রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিরই ইঙ্গিত।
তৃতীয়ত, এই দুটি গভর্নর নির্বাচন ছাড়াও, বিভিন্ন রাজ্য আইনসভা এবং স্থানীয় নির্বাচনেও ডেমোক্র্যাটরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে। বিশেষ করে ভার্জিনিয়ায় রাজ্য বিধানসভায় রিপাবলিকানদের আধিপত্য অনেকটাই কমে এসেছে এবং বেশ কিছু আসনে ডেমোক্র্যাটরা জয়লাভ করেছে। এটি শুধু একটি রাজ্যের ঘটনা ছিল না, বরং সারা দেশে স্থানীয় স্তরে ডেমোক্র্যাটদের পুনরুত্থানের একটি চিত্র তুলে ধরে।
**ট্রাম্পের প্রথম পরীক্ষা এবং এর ফলাফল**
এই নির্বাচনগুলোকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য একটি ‘রেফারেন্ডাম’ বা গণভোট হিসেবে দেখা হয়েছিল। ট্রাম্প নিজে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন এবং তার সমর্থনকে রিপাবলিকান প্রার্থীরা নিজেদের শক্তি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ফলাফল বলছে ভিন্ন কথা। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান এবং তার বিতর্কিত নীতিগুলো এই রাজ্যগুলোতে ভোটারদের, বিশেষ করে শহরতলি এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের, ডেমোক্র্যাটদের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া, স্বাস্থ্যসেবা বিল পাসে ব্যর্থতা এবং দেশের ক্রমবর্ধমান মেরুকরণ এই নির্বাচনের ফলাফলে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই পরাজয় ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রভাবের সীমাবদ্ধতা উন্মোচন করেছে এবং দেখিয়ে দিয়েছে যে তার সমর্থন একটি নির্দিষ্ট অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
**ডেমোক্র্যাটদের জন্য নতুন আশার আলো**
এই জয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য এক নতুন আশার আলো বয়ে এনেছে। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয়ের পর দলটি যখন দিশাহীনতায় ভুগছিল, তখন এই জয় তাদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা এনে দিয়েছে। এই ফলাফল ডেমোক্র্যাটদের ২০২৪ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে। তারা এখন বুঝতে পারছে যে ট্রাম্পের বিরোধিতা করে এবং একটি প্রগতিশীল বার্তা নিয়ে জনগণের কাছে গেলে জয়ী হওয়া সম্ভব।
এই জয় ডেমোক্র্যাটদের ফান্ডরেইজিং এবং গ্রাসরুট লেভেলের কাজকেও উৎসাহিত করবে। নবনির্বাচিত গভর্নর এবং স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটরা এখন রাজ্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারবে, যা ভবিষ্যতে তাদের জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে।
**রিপাবলিকানদের জন্য শিক্ষা**
রিপাবলিকান পার্টির জন্য এই ফলাফল এক গভীর চিন্তার কারণ। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এবং তার কড়া অভিবাসন নীতির উপর নির্ভর করে নির্বাচন জেতার কৌশল যে সব সময় কার্যকর হবে না, তা এই নির্বাচনগুলো প্রমাণ করেছে। রিপাবলিকানদের এখন তাদের কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং ভোটারদের বৃহত্তর অংশকে আকৃষ্ট করার জন্য নতুন পথ খুঁজে বের করতে হবে।
এই নির্বাচনগুলো স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, মার্কিন রাজনীতিতে ‘নীল ঢেউ’ (Blue Wave) এর আগমন ঘটেছে এবং আগামী বছরগুলোতে এটি আরও শক্তিশালী হতে পারে। ট্রাম্পের জন্য এটি একটি সুস্পষ্ট ধাক্কা, যা তার ক্ষমতার দ্বিতীয়ার্ধের পথকে আরও কঠিন করে তুলবে। এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্প এবং রিপাবলিকানরা এই পরাজয় থেকে কী শিক্ষা নেয় এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা কীভাবে নিজেদের প্রস্তুত করে।
—


