## খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে জার্মানি থেকে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স: এক আশার আলো?
দেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে, তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে লন্ডনে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং খবর পাওয়া গেছে, তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার জন্য জার্মানি থেকে একটি বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে তার জীবন বাঁচানোর এক শেষ চেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
**প্রেক্ষাপট: সংকটজনক স্বাস্থ্য এবং উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা**
বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল এবং বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়েছে যে, তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। তিনি লিভার সিরোসিস, হার্ট, কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিসসহ একাধিক জটিল রোগে ভুগছেন। চিকিৎসকদের মতে, দেশে তার সুচিকিৎসার সব পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে এবং তার জীবন বাঁচাতে হলে দ্রুত তাকে মাল্টিডিসিপ্লিনারি অ্যাডভান্সড মেডিকেল সেন্টার (অনেকগুলো রোগ একসঙ্গে দেখার মতো বিশেষজ্ঞ হাসপাতাল) রয়েছে এমন কোনো উন্নত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অপরিহার্য। বিশেষ করে, তার লিভারের যে জটিলতা রয়েছে, তার জন্য উন্নত বিশ্বেই আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যমান।
**জার্মানি থেকে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স: বিস্তারিত**
এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে, বেগম জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লন্ডনে তার বড় ছেলে তারেক রহমান ও পরিবারের অন্য সদস্যরা রয়েছেন, যারা এই প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করছেন।
জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিরাপদে এবং সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার অধীনে স্থানান্তর করার জন্য জার্মানি থেকে একটি অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এই ধরনের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সাধারণ উড়োজাহাজ থেকে ভিন্ন। এগুলোতে থাকে আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স দল, নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (ICU) সুবিধা, ভেন্টিলেটর, মনিটর এবং জীবন রক্ষাকারী অত্যাধুনিক সব সরঞ্জাম। রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রেখে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য এটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়। এটি এমন এক ধরনের ব্যবস্থা, যেখানে উড্ডয়নকালেও একজন মুমূর্ষু রোগীকে সম্পূর্ণ মেডিকেল সাপোর্টে রাখা সম্ভব হয়।
**লজিস্টিকস ও চ্যালেঞ্জসমূহ**
এই আন্তর্জাতিক মেডিকেল ট্রান্সফার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং জটিল। এর সাথে জড়িত বেশ কিছু লজিস্টিকস ও চ্যালেঞ্জ:
1. **সরকারের অনুমতি:** বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়ে নিজ বাসভবনে অবস্থান করছেন এবং বিদেশ যাওয়ার জন্য সরকারের বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সরকারের কাছে এই অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এটিই বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
2. **মেডিকেল টিম:** এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আসা আন্তর্জাতিক মেডিকেল টিম এবং লন্ডনে তার চিকিৎসার জন্য নির্বাচিত হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন জরুরি।
3. **গন্তব্য হাসপাতাল:** লন্ডনে কোন হাসপাতালে তার চিকিৎসা হবে, সে বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতি এবং ভর্তির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
4. **ভিসা ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা:** রোগীর ও তার সাথে থাকা পরিবারের সদস্যদের মেডিকেল ভিসা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে।
**জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া ও গুরুত্ব**
বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। তার দ্রুত সুস্থতার জন্য অনেকেই প্রার্থনা করছেন এবং দ্রুত তার বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের আগমন সংবাদ তাই সকলের মনে এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে। দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে তার সুচিকিৎসা পাওয়া দেশের আপামর জনতার দাবি।
**উপসংহার**
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য এটি এক কঠিন সময়। জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার খবর তার উন্নত চিকিৎসার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমরা আশা করি, দ্রুত সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে এবং তিনি সময়মতো উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতে পারবেন। তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করে আমরা এই প্রক্রিয়ার সফল সমাপ্তি প্রত্যাশা করি। দেশের একজন প্রবীণ রাজনৈতিক নেতার সুচিকিৎসা নিশ্চিত হওয়া সমাজের জন্য এক ইতিবাচক বার্তা বহন করবে।



