**কুয়ালালামপুরে শপিং মলে সাঁড়াশি অভিযান, বাংলাদেশিসহ আটক ১২৪**
মালয়েশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এক স্বপ্নভূমি, যেখানে উন্নত জীবন ও ভালো আয়ের আশায় পাড়ি জমান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। বাংলাদেশিদের কাছেও দেশটি অত্যন্ত জনপ্রিয় গন্তব্য। কিন্তু সম্প্রতি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা আবারও অবৈধ অভিবাসনের ঝুঁকি এবং এর ভয়াবহ পরিণতিকে সামনে এনেছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রের দুটি সুপরিচিত পাইকারি শপিং মলে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ১২৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে স্থানীয় প্রশাসন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছেন।
**কী ঘটেছিল?**
ঘটনাটি ঘটেছে কুয়ালালামপুরের ব্যস্ত চৌকিট এলাকায়। স্থানীয় নাগরিকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগের ভিত্তিতে পাইকারি শপিং মল ‘জিএম প্লাজা’ এবং ‘হাজী তাইব হোলসেল সেন্টার’-এ কুয়ালালামপুর অভিবাসন বিভাগ একটি বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, এসব শপিং মলে বিপুল সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী কাজ করছে, যা শুধু স্থানীয়দের কর্মসংস্থানকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
**অভিযানের বিস্তারিত**
গত রবিবার (১৪ই জুলাই, ২০২৪) গভীর রাতে অভিবাসন বিভাগের একটি বিশেষ দল অতর্কিতে এই দুটি শপিং মলে প্রবেশ করে। অভিযানের সময়, কর্মকর্তারা প্রতিটি দোকানে তল্লাশি চালান এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের কাগজপত্র যাচাই করেন। যারা বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি অথবা যাদের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল, তাদের তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়। পুরো এলাকায় এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, কারণ এমন সাঁড়াশি অভিযানের জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না।
**আটককৃতদের জাতীয়তা**
এই অভিযানে মোট ১২৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে মালয়েশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগরিক রয়েছেন। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের নাগরিকরা এই আটককৃতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। দুঃখজনকভাবে, আটককৃতদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকদের সংখ্যা নেহাত কম নয়, যা বিদেশে বৈধভাবে কাজ করতে যাওয়া এবং সেখানে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।
**কেন এমন অভিযান?**
মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বরাবরই কঠোর অবস্থানে রয়েছে। দেশটির অর্থনীতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার স্বার্থে তারা নিয়মিত এমন অভিযান পরিচালনা করে থাকে। বিশেষ করে, যে সব এলাকায় স্থানীয়দের অভিযোগ বেশি থাকে, সেখানে অভিবাসন বিভাগ কঠোর পদক্ষেপ নেয়। অবৈধ শ্রমিকদের কারণে স্থানীয় নাগরিকদের কর্মসংস্থান হারানো এবং সরকারি রাজস্বে প্রভাব পড়ার বিষয়গুলো মালয়েশিয়া সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখে।
**পরবর্তী পদক্ষেপ এবং প্রভাব**
আটককৃতদের এখন কুয়ালালামপুর অভিবাসন বিভাগের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হবে। সেখানে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী, অবৈধভাবে বসবাস বা কাজ করার দায়ে জরিমানা, কারাদণ্ড এবং নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। একবার নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলে, তাদের জন্য ভবিষ্যতে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বিদেশে অবস্থান করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রবাস জীবনকে নিরাপদ ও সম্মানজনক করতে হলে অবশ্যই বৈধ পথে যেতে হবে এবং আইন মেনে চলতে হবে। এটি শুধু ব্যক্তি সুরক্ষার জন্যই নয়, দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্যও অত্যন্ত জরুরি। যারা বিদেশে যেতে ইচ্ছুক, তাদের উচিত সব ধরনের প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকা এবং সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বৈধ পথে যাওয়া।
—



