**কুকুরছানা হত্যা: ক্ষুব্ধ জয়া, চাইলেন শাস্তিও**
মনুষ্যত্বের কলঙ্কিত অধ্যায় আবারও উন্মোচিত হলো পাবনার ঈশ্বরদীতে। আটটি নিরীহ কুকুরছানাকে নির্মমভাবে পুকুরে ফেলে হত্যার মর্মান্তিক ঘটনা শুধু এলাকার মানুষকে নয়, নাড়া দিয়েছে পুরো দেশকে। এই অমানবিক খবর শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও প্রাণিপ্রেমী জয়া আহসান। তিনি শুধু ক্ষোভ প্রকাশ করেই থামেননি, এমন নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন।
**ঈশ্বরদীর সেই নৃশংসতা: অবলা প্রাণের আর্তনাদ**
কী অপরাধ ছিল ঈশ্বরদীর সেই নিষ্পাপ কুকুরছানাগুলোর? আটটি অবলা, নিষ্পাপ প্রাণকে বাঁচতে না দিয়ে পুকুরের গভীর জলে ছুঁড়ে ফেলার এই জঘন্য কাজ দেখে যে কারো হৃদয় কেঁপে উঠবে। মানুষের ভেতরের হিংস্রতা যখন এমন নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়, তখন আমাদের সমাজে মানবিকতার কোন স্তরে পৌঁছেছে এই ঘটনা, তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। এক মুহূর্তের জন্যও কি তাদের মনে হয়নি, এই ছোট প্রাণগুলো কত অসহায়? এই ঘটনা সমাজের বিবেককে প্রশ্ন করে, আমরা কি সত্যিই সভ্য জাতি হিসেবে নিজেদের দাবি করতে পারি?
**জয়া আহসানের প্রাণিপ্রেম: এক ‘প্রাণবিক বন্ধু’র আক্ষেপ**
জয়া আহসান মানেই যেন এক ভিন্ন ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। পর্দায় যেমন তিনি অনবদ্য, তেমনি পর্দার বাইরেও তার হৃদয়জুড়ে রয়েছে পশুপাখির জন্য অফুরন্ত মায়া। তার এই প্রাণিপ্রেমের কথা অনেকেই জানেন এবং তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। বহুবার তিনি বিভিন্ন পশুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের জন্য সোচ্চার হয়েছেন। তার এই অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতিদানও তিনি পাচ্ছেন। সম্প্রতি পশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন দ্য পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার (পাও) তাকে ‘প্রাণবিক বন্ধু’ শিরোনামে সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এই পুরস্কার তার দীর্ঘদিনের প্রাণিপ্রেমের এক স্বীকৃতি।
আর এই ‘প্রাণবিক বন্ধু’ই চুপ থাকতে পারেননি ঈশ্বরদীর ঘটনা শুনে। আটটি কুকুরছানাকে নির্মমভাবে হত্যার খবর তার বিবেককে নাড়া দিয়েছে গভীরভাবে। একজন সত্যিকারের প্রাণিপ্রেমী হিসেবে এমন ঘটনা তাকে মর্মাহত করেছে এবং তিনি দ্রুত এর বিরুদ্ধে তার কণ্ঠস্বর তুলে ধরেছেন।
**জয়ার ক্ষোভ ও শাস্তির দাবি: এক বলিষ্ঠ আহ্বান**
জয়া আহসান তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “এই ধরনের নৃশংসতা কোনো সুস্থ সমাজের অংশ হতে পারে না। যারা এই কাজ করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। অবলা প্রাণীদের প্রতি এমন নিষ্ঠুরতা বন্ধ না হলে আমরা মানবতা থেকে আরও দূরে সরে যাব।” তিনি মনে করেন, শুধুমাত্র প্রতিবাদ নয়, প্রয়োজন আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে কঠোর বার্তা দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন জঘন্য কাজ করার সাহস না পায়।
তার দাবি স্পষ্ট – যারা এই অমানবিক কাজের পেছনে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। এমন ঘটনা দেখেও যদি আমরা চুপ থাকি, তবে আগামীতে আরও বড় অপরাধের পথ খুলে যাবে।
**আমাদের দায়িত্ব: সংবেদনশীল সমাজের জন্য**
জয়া আহসানের এই প্রতিবাদ শুধুমাত্র একটি ঘটনার বিরুদ্ধেই নয়, এটি সকল প্রাণীর জন্য ন্যায়বিচারের এক বলিষ্ঠ আহ্বান। শুধু কুকুরছানা নয়, যেকোনো প্রাণীর প্রতি এই ধরনের অমানবিক আচরণ বন্ধ হওয়া জরুরি। মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব এই অবলা প্রাণীদের রক্ষা করা, তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো। প্রাণী কল্যাণ আইন থাকা সত্ত্বেও এমন ঘটনা ঘটলে আইনের প্রয়োগের অভাব প্রকট হয়ে ওঠে।
সরকার, প্রশাসন এবং সাধারণ জনগণ – সকলেরই উচিত এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে চাপ সৃষ্টি করা। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রাণীদের প্রতি আমাদের আচরণই আমাদের সভ্যতার মাপকাঠি। আসুন, জয়া আহসানের সাথে সুর মিলিয়ে আমরাও এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই এবং একটি সংবেদনশীল সমাজের স্বপ্ন দেখি, যেখানে প্রতিটি প্রাণী সম্মানের সাথে বাঁচতে পারে।



