দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই ১৫ জন চাকরিরত সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনা সদর দপ্তর। তবে, একজন অভিযুক্ত কর্মকর্তা এখনো পলাতক রয়েছেন।শনিবার (১১ অক্টোবর) সেনাসদরে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান। তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্যের বিস্তারিত তুলে ধরেন, যা সামরিক বাহিনীর ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান জানান, মোট ২৫ জন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত। বাকি ১৬ জনের মধ্যে ১৫ জন চাকরিরত অবস্থায় (যার মধ্যে একজন অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে বা এলপিআরে আছেন) সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন। দুঃখজনকভাবে, এখনো একজন অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না এবং তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই পরোয়ানার প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে। এই ঘটনা বাহিনীর মধ্যে জবাবদিহিতার গুরুত্ব তুলে ধরে।সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান আরও জানান, যুদ্ধাপরাধের মতো গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হলে কোনো সেনা সদস্যকে সঙ্গে সঙ্গে চাকরি থেকে বরখাস্ত হিসেবে গণ্য করা হবে কিনা, সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আইনগত ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। তিনি মন্তব্য করেন, গত ৫৪ বছরে সেনাবাহিনী সদস্যদের সকল ধরনের অপরাধে সেনা আইনেই বিচার হয়েছে। তবে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার এবং সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
হেফাজতে থাকা কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, ট্রাইব্যুনালের আইনগত ব্যাখ্যা পাওয়ার পরই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আগামী ২২ অক্টোবরের মধ্যে অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করতে হবে এবং এর আগেই তারা ট্রাইব্যুনালের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা পেয়ে যাবেন।এ সময় তিনি দৃঢ়ভাবে জানান যে, সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে এবং করবে। বাহিনীর পক্ষ থেকে বিচার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও দ্রুত করার জন্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।এই ঘটনা দেশের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে, যেখানে সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জবাবদিহিতার আওতায় আসছেন। সেনা সদর দপ্তরের এই দ্রুত পদক্ষেপ এবং স্বচ্ছ ব্রিফিং প্রমাণ করে যে, কোনো অপরাধী, তার পদমর্যাদা যাই হোক না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে নয়। জাতি আশা করে, এই বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জবাবদিহিতার সংস্কৃতি আরও দৃঢ় হবে।


