এবার জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) বয়কট করলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাত হারানো যুবক আরজে আতিকুল গাজী।
দেশের রাজনীতিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মেরুকরণ দেখা যায়। কিন্তু যখন একজন আত্মত্যাগী যুবক, যার আত্মদান দেশের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে, সে যখন কোনো রাজনৈতিক দলকে বয়কট করে, তখন সেই খবর শুধু শিরোনাম হয় না, বরং অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। সম্প্রতি সেই ঘটনাটিই ঘটেছে। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে নিজের হাত হারানো সেই সাহসী যুবক, জনপ্রিয় আরজে আতিকুল গাজী, এবার সরাসরি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-কে বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
**কে এই আরজে আতিকুল গাজী?**
আরজে আতিকুল গাজী নামটি দেশের আপামর জনতার কাছে কোনো অপরিচিত নাম নয়। সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে দেশের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক জ্বলন্ত মশাল। সেই আন্দোলনের এক মর্মান্তিক মুহূর্তে তিনি তার একটি হাত হারান। তার এই আত্মত্যাগ দেশের অসংখ্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। পঙ্গুত্ব বরণ করেও তিনি মনোবল হারাননি, বরং তার কণ্ঠস্বর আরও জোরালো হয়েছে। তিনি হয়ে উঠেছিলেন সেই আন্দোলনের এক জীবন্ত প্রতীক, এক অবিস্মরণীয় মুখ, যিনি নিজের সর্বস্ব দিয়ে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
**কেন এই কঠোর সিদ্ধান্ত?**
এত ত্যাগ স্বীকারের পর, কেন হঠাৎ করে তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টিকে বয়কটের মতো এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেন? আতিকুল গাজীর ঘনিষ্ঠ সূত্র এবং তার নিজের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যে এর কারণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে আতিকুল গাজী আশা করেছিলেন যে, যেই রাজনৈতিক দলগুলো এই আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলেছে, তারা তার মতো আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু এনসিপি-র পক্ষ থেকে তিনি আশানুরূপ সমর্থন বা সহযোগিতার হাত পাননি। বরং তিনি অনুভব করেছেন যে, তার আত্মত্যাগকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু তার ব্যক্তিগত কষ্ট বা তার ভবিষ্যতের প্রতি দলটির কোনো প্রকৃত দায়বদ্ধতা নেই।
আতিকুল গাজী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন যে, অনেক রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে এনসিপি, আন্দোলনের সময় বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিলেও, পরবর্তীতে সেই প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তার মতে, যারা আন্দোলনকারীদের রক্ত ও ঘাম দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় করেছে, তাদের উচিত ছিল সেই শহীদ ও আহতদের পাশে থাকা এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। তিনি অভিযোগ করেন যে, এনসিপি তার প্রতি কোনো প্রকার সহানুভূতি বা বাস্তব সহযোগিতা না দেখিয়ে কেবল মৌখিক সমর্থন এবং ফটোসেশনের মাধ্যমেই দায় সেরেছে।
**রাজনৈতিক মহলে এর প্রভাব**
আতিকুল গাজীর এই সিদ্ধান্ত জাতীয় নাগরিক পার্টির জন্য একটি বড় ধাক্কা। বিশেষ করে তরুণ সমাজ এবং যারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল ধারার সাথে যুক্ত ছিলেন, তাদের কাছে এই ঘটনা একটি গভীর বার্তা বহন করছে। এটি কেবল একজন ব্যক্তির বয়কট নয়, বরং এটি সেই সকল মানুষের হতাশার প্রতিচ্ছবি যারা আন্দোলনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সঠিক মূল্যায়ন বা সমর্থন পাননি।
এই ঘটনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও একটি কঠিন বার্তা দিচ্ছে – জনগণের আবেগ ও আত্মত্যাগকে সস্তা রাজনৈতিক পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করলে তার ফলাফল শুভ হয় না। একজন হাত হারানো যুবকের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর নিঃসন্দেহে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নৈতিকতার প্রশ্নটিকে আরও একবার সামনে নিয়ে এলো।
**শেষ কথা:**
আরজে আতিকুল গাজীর এই সাহসী পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে কোনো আপস করা যায় না। তার এই বয়কট শুধুমাত্র এনসিপি-র প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এক উচ্চতর নৈতিকতার আহ্বান। যারা দেশ ও জাতির জন্য আত্মত্যাগ করেন, তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি দলের নৈতিক দায়িত্ব। আশা করা যায়, আতিকুল গাজীর এই প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হতে বাধ্য করবে এবং দেশের জন্য যারা কিছু করতে চান, তাদের প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে অনুপ্রাণিত করবে।
—



