ইসরায়েলি সম্পৃক্ততার অভিযোগে স্পেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনা: ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের ঢেউ ইউরোপে
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থী মনোভাব ক্রমশ বাড়ছে। এর ধারাবাহিকতায় ইসরায়েলের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে স্পেনের বেশ কয়েকটি পরিচিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীরা। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের শুক্রবারের (৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। এই ঘটনা কেবল স্পেনে সীমাবদ্ধ থাকেনি, ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলেও এর ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনপন্থী অভিযাত্রীদের গাজাগামী মানবিক ত্রাণবাহী বহর ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’-তে ইসরায়েলি বাহিনী বাধা দেওয়ার পরই স্পেনের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই ঘটনার প্রতিবাদে স্প্যানিশ বিক্ষোভকারীরা তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তায় নেমে আসে এবং যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
তাদের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে সেইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর, যাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা স্টারবাকস, বার্গার কিং এবং ক্যারেফোরের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর দোকান ও রেস্তোরাঁয় হামলা চালায়। তারা এসব প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে ইসরায়েলবিরোধী নানা স্লোগান লিখে দেয়, যা তাদের প্রতিবাদের স্পষ্ট বার্তা বহন করে। এ সময় তাদের হাতে দেখা যায় ফিলিস্তিনের পতাকা, পোস্টার এবং ব্যানার, যা তাদের ফিলিস্তিনের প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করে।
পরিস্থিতি এক পর্যায়ে সহিংস রূপ ধারণ করলে বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এর আগে একই দিনে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি বাধার প্রতিবাদে শহরটির শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমে আসে, যা ছিল এই বৃহত্তর প্রতিবাদের একটি অংশ।
শুধু স্পেন নয়, ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইউরোপের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ইতালিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা গাড়ির টায়ার ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথগুলো বন্ধ করে দেয়, যা তাদের প্রতিবাদের তীব্রতা বোঝায়।
স্থানীয় সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, সেদিন দেশটির তুরিন শহরের রিং রোডে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এই ঘটনাগুলো স্পষ্ট করে তোলে যে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে জনমনে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এই ঘটনাগুলো ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের ক্ষোভ এবং ফিলিস্তিনের প্রতি ক্রমবর্ধমান সমর্থনকে স্পষ্ট করে তোলে। বিশেষত মানবিক ত্রাণবাহী বহরে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। স্পেন ও ইতালির এই বিক্ষোভগুলো সেই প্রতিবাদেরই এক দৃশ্যমান রূপ, যা ইঙ্গিত দেয় যে এই সংঘাতের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে জনবিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন গভীর উদ্বেগের সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।


