**ইউনূস আমার মা’কে ছুঁতে পারবে না: একটি পুত্র ও রাষ্ট্রের দৃঢ় অঙ্গীকার**
আজ থেকে প্রায় এক দশক আগে, ২০১২ সালের এক উত্তপ্ত রাজনৈতিক সময়ে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক দৃঢ় ও অকপট মন্তব্য আলোড়ন তুলেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য পুত্র এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, বার্তা সংস্থা আইএএনএস-এর কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন: “They will not be able to kill…” (তারা হত্যা করতে পারবে না)। একই কথার প্রতিধ্বনি, আরও ব্যক্তিগত ও তীব্র সুর নিয়ে, অন্য এক প্রেক্ষাপটে ধ্বনিত হয়েছিল: “ইউনূস আমার মা’কে ছুঁতে পারবে না।”
এই বাক্যটি কেবল একটি রাজনৈতিক মন্তব্য ছিল না; এটি ছিল এক পুত্রের তার মায়ের প্রতি অটল ভালোবাসা, সুরক্ষা ও আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ। এটি ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বারবার ফিরে আসা ষড়যন্ত্র, হত্যাচেষ্টা এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বারবার বলি হওয়া এক পরিবারের উত্তরাধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধের ঘোষণা।
**প্রেক্ষাপট: ২০১২ সালের উত্তাপ**
২০১২ সাল ছিল বাংলাদেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যাহার এবং কথিত দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তখন দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা চলছিল। এই সময়েই গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক চরম অবনতির দিকে যায়। সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল যে, ড. ইউনূস বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অন্যদিকে, ড. ইউনূসের সমর্থকরা বিষয়টিকে সরকারের প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছিলেন।
ঠিক এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ‘ইউনূস আমার মা’কে ছুঁতে পারবে না’ এবং ‘তারা হত্যা করতে পারবে না’ মন্তব্যটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এখানে ‘ছুঁতে পারবে না’ বা ‘হত্যা করতে পারবে না’ বলতে শুধুমাত্র শারীরিক ক্ষতিকে বোঝানো হয়নি, বরং রাজনৈতিকভাবে হেয় করা, ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা, বা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার যেকোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এক অটল প্রতিরোধের ইঙ্গিত ছিল।
**এক পুত্রের চোখে মা এবং তাঁর সংগ্রামের পথ**
সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই মন্তব্যটি বুঝতে হলে শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং ব্যক্তিগত জীবনের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে, শেখ হাসিনা তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হারানোর পর এক দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। দেশে ফেরার পর থেকে তাঁকে বারবার হত্যাচেষ্টা, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা তার মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ উদাহরণ।
এমতাবস্থায়, সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই উক্তি কেবল একজন সাধারণ পুত্রের তার মায়ের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ছিল না, এটি ছিল একজন রাজনৈতিক উত্তরাধিকারীর তার মায়ের রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এক জোরালো ঘোষণা। তিনি জানতেন, তাঁর মায়ের জীবন শুধু তাঁর একার নয়, দেশের কোটি কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি। তাই, কোনো ষড়যন্ত্র বা আঘাত যেন তাঁর মাকে স্পর্শ করতে না পারে, সেই বার্তাটি ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট।
**ড. ইউনূস এবং বিতর্কিত ভূমিকা**
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত একজন ব্যক্তিত্ব হলেও, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা নিয়ে সবসময়ই বিতর্ক ছিল। বিশেষ করে ২০১২ সালের দিকে, সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, তিনি পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করতে লবিং করেছেন। সজীব ওয়াজেদ জয়ের মন্তব্যটি সেইসব অভিযোগের প্রেক্ষাপটেই এসেছিল, যেখানে তিনি ড. ইউনূসকে তার মায়ের বিরুদ্ধে চলমান ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছিলেন। এই মন্তব্যের মাধ্যমে জয় মূলত বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে থেকে কোনো শক্তির ইন্ধনে প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার বা তাঁর ক্ষতি করার কোনো চেষ্টা সফল হবে না।
**দৃঢ়তা ও জাতীয় আত্মমর্যাদার প্রতীক**
‘ইউনূস আমার মা’কে ছুঁতে পারবে না’ – এই বাক্যটি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় আত্মমর্যাদা এবং নেতৃত্বের দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, দেশের বিরুদ্ধে বা দেশের নির্বাচিত নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হতে পারে না, কারণ জনগণ এবং তাদের প্রিয় নেতা-নেত্রীর প্রতি তাঁদের পরিবারের সদস্যরা সর্বদা ঢাল হয়ে দাঁড়াতে প্রস্তুত।
সেই ঘটনার এক দশক পেরিয়ে গেলেও, সজীব ওয়াজেদ জয়ের সেই দৃঢ় কণ্ঠস্বর আজও প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ষড়যন্ত্রের কালো ছায়া বা ক্ষমতার জন্য অনৈতিক লড়াই নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই মন্তব্যটি প্রমাণ করে যে, দেশের নেতৃত্ব যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং দেশের সম্মান ও নেতার নিরাপত্তা রক্ষায় কোনো আপোষ করবে না। এটি কেবল একটি বাক্য নয়, এটি এক পুত্র, এক পরিবার এবং এক জাতির অটল বিশ্বাসের প্রতীক।


