## আসামিরা পলাতক থাকলেও, তারা বিচার এড়াতে পারবে না: চিফ প্রসিকিউটর
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেছেন যে, আসামিরা পলাতক থাকলেও তারা কোনো অবস্থাতেই বিচার এড়াতে পারবে না। রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এই কথা বলেন, যা ন্যায়বিচারের প্রতি দেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসে রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ আশুলিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের পর। এটি মূলত জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীর লাশ পোড়ানোর এক মর্মন্তুদ ঘটনাকে কেন্দ্র করে করা মামলা। চিফ প্রসিকিউটরের সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে এই মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলো, যার প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী সোমবার। এই মামলাটি দেশের ইতিহাসে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তার বক্তব্যে মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের স্থান ও পদ্ধতি নিয়েও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কোনো অভ্যন্তরীণ সামরিক আদালতে নয়, এমনকি দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আদালতেও সম্ভব নয়। এই ধরনের গুরুতর অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আওতাতেই পরিচালিত হতে হবে, যা এই বিশেষ ধরনের অপরাধের জন্য বিশেষভাবে গঠিত। এর আগে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের এক প্রশ্নের জবাবেও চিফ প্রসিকিউটর একই কথা বলেছিলেন, যা এই বিচার ব্যবস্থার স্বতন্ত্রতা ও গুরুত্বকে তুলে ধরে। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের মূল নীতিমালার সাথে সংগতিপূর্ণ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য।
একই দিনে, সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের পর ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। ট্রাইব্যুনাল জানতে চায় যে, ‘ডিফেন্সের উচ্চপদে যারা আছেন, তাদের বিচার এই ট্রাইব্যুনালে হবে নাকি অন্য ট্রাইব্যুনালে হবে – এরকম একটা প্রশ্ন এসেছে।’ এর জবাবে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এই বিতর্ককে ‘অহেতুক’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি জোরালোভাবে বলেন যে, আইন সংশোধন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও এই বিচারের আওতায় আনা হয়েছে এবং আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারা তুলে ধরে তিনি তার বক্তব্যকে সমর্থন করেন। এর মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয় যে, মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে পদমর্যাদা নির্বিশেষে সবার জন্যই বিচার প্রযোজ্য। কোনো ব্যক্তি তার পদমর্যাদা বা পেশাগত পরিচয়ের কারণে এই আইনের ঊর্ধ্বে নন, এবং আইন সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর।
সামগ্রিকভাবে, চিফ প্রসিকিউটরের এই বক্তব্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার এবং বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেয়। এটি প্রমাণ করে যে, দেশের আইন সবার জন্য সমান এবং কোনো অপরাধী, তার অবস্থান বা পলাতক থাকা সত্ত্বেও, ন্যায়বিচারের হাত থেকে রক্ষা পাবে না। আশুলিয়ার মতো নৃশংস ঘটনার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়া দেশবাসীর জন্য এক আশার আলো, যা ভবিষ্যতে এমন অপরাধ দমনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।



