এখানে একটি ব্লগ পোস্ট রয়েছে:
—
## আল্লাহর অপার করুণা আমরা আ. লীগ থেকে দুজনই বহিষ্কার হয়েছি : লতিফ সিদ্দিকী
সদ্য কারামুক্ত সাবেকমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আবারও তার চিরাচরিত স্পষ্টবাদী ও সাহসী মন্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছেন গণমাধ্যমে। গত শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ছাতিহাটিতে উপস্থিত কর্মী-সমর্থক-অনুসারীদের উদ্দেশে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে নিজের বহিষ্কারকে তিনি ‘আল্লাহর অপার করুণা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথচলা নিয়েও দিয়েছেন সুনির্দিষ্ট বার্তা।
**আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার: এক ‘অপার করুণা’**
বক্তব্যের শুরুতেই লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ থেকে নিজের এবং অন্য একজনের (সম্ভবত তার ভাই কাদের সিদ্দিকী) বহিষ্কারের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, “যা আল্লাহর অপার করুণা, আমরা আওয়ামী লীগ থেকে দুজনই বহিষ্কার হয়েছি। না হলে আজকে আমরা ঘৃণিত হতাম।” তার এই মন্তব্য বর্তমান আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের পরিস্থিতি এবং নেতৃত্বের প্রতি তার গভীর অসন্তোষের ইঙ্গিত দেয়।
কারাগারে থাকার সময়কার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “আমি জেলে গিয়ে দেখেছি সেই বড় বড় কুতুবরা ৫ই আগস্টের আগে যে ভাব ধরত, সে ভাব ধ্বংস হয়ে গেছে। আল্লাহ ভাববাদীদের অহংকারীদের পছন্দ করে না।” এই কথাগুলো স্পষ্টতই আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মহলের প্রতি তার তীক্ষ্ণ সমালোচনা। তিনি মনে করেন, অহংকার ও ভাববাদিতার কারণে তারা আল্লাহর অপছন্দের পাত্র হয়েছেন।
**ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথ ও কাদের সিদ্দিকীর প্রতি অঙ্গীকার**
নিজের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে লতিফ সিদ্দিকী অত্যন্ত স্পষ্টভাষী। তিনি ঘোষণা দেন, “আমি কোনো দিন কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেব না।” তবে তিনি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন ও আনুগত্যের অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, “কিন্তু বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সাথে আল্লাহর রহমতে একশ ভাগ থাকব।”
কাদের সিদ্দিকীর প্রতি তার এই অটল সমর্থনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, তিনি শুনেছেন বঙ্গবীর বলেছেন, তার এলাকার মানুষ লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে খুব মানসিক কষ্টে আছেন এবং তারা তাকে অনেক ভালোবাসেন। এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে না পারলেও, লতিফ সিদ্দিকী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “যেটা পারব লোভে পড়ব না। স্বার্থের পিছনে ঘুরব না, অন্যায়কে ভয় পাব না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা এখন স্পষ্ট, আমি বলি—বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের নেতৃত্বেই আমিও কাজ করব, দল করি আর না করি।” এই মন্তব্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতি তার পরোক্ষ কিন্তু দৃঢ় সমর্থনকেই নির্দেশ করে।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ‘পরিষদ’ নিয়েও লতিফ সিদ্দিকী তার নিজস্ব বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তিনি এটিকে ‘সরকার’ বলতে নারাজ। বরং এটিকে একটি ‘পরিষদ’ হিসেবেই উল্লেখ করেন। তার বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু না বললেও, লতিফ সিদ্দিকী মনে করেন, এই পরিষদ স্থায়িত্ব পাবে না।
তিনি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর পারে নাই। আমরাই তাকে বিপদগ্রস্ত করেছি। জিয়াউর রহমান কামান দেখে এসেছে পারে নাই। এরশাদ পারে নাই, খালেদা পারে নাই।” এই ধারাবাহিকতায় তিনি আরেকজনের নাম নিতে না চেয়ে বলেন, “একটা খুনও যা হাজারটা খুনও তাই।” এই শেষ বাক্যটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং দেশের রাজনৈতিক খুন ও সহিংসতার প্রতি তার তীব্র প্রতিবাদকে তুলে ধরে।
লতিফ সিদ্দিকীর এই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী সাবেক এমপি লাইলা সিদ্দিকী, আব্দুল্লাহ বীরপ্রতিক, টাঙ্গাইল জেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক হিটলু, কালিহাতী উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকী, বাসাইল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি রাহাত হাসান টিপু, সখীপুর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন সজীব, কালিহাতী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি ইতহার সিদ্দিকী প্রমুখ। এই উপস্থিতি তার বক্তব্যের গুরুত্ব এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাথে তার নতুন রাজনৈতিক জোটের ইঙ্গিত দেয়।
কারামুক্তির পর আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর এই কড়া বার্তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারকে ‘আল্লাহর করুণা’ বলা, রাজনীতিতে স্বতন্ত্র অবস্থান গ্রহণ এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তার দৃঢ় জোটবদ্ধতা—এই সবই তার রাজনৈতিক পথচলার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। তার এই মন্তব্যগুলো আগামী দিনের রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
—



