**গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন নুরুল আলম। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের আকবরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকাতেই এখন শোকের ছায়া। তিন সন্তান এখনো জানে না তাদের বাবা নেই।**
জীবন এক অনিশ্চিত যাত্রা, কখন কোথায় কার জীবনের গল্প আচমকা থেমে যায়, তা কেউ জানে না। গত বৃহস্পতিবার এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা কেড়ে নিল চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার এক প্রাণবন্ত যুবকের জীবন। সুদূর সৌদি আরবে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আধুনগর ইউনিয়নের আকবরপাড়া গ্রামের কৃতি সন্তান নুরুল আলম। তার মৃত্যুর খবর মুহূর্তেই শোকের চাদরে ঢেকে দিয়েছে পুরো লোহাগাড়ার আকাশ, বিশেষ করে আকবরপাড়া গ্রাম।
পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে, সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণে নুরুল আলম পাড়ি জমিয়েছিলেন সুদূর সৌদি আরবে। প্রবাসী জীবন মানেই এক সংগ্রাম, দেশের মায়া ছেড়ে দূর পরবাসে দিনরাত খেটে চলা। নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে পরিবারের জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাওয়া। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা তার সব স্বপ্ন চুরমার করে দিল। অপ্রত্যাশিতভাবে এই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হলো নুরুল আলমকে। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের আকবরপাড়া গ্রামের একজন অত্যন্ত প্রিয় এবং পরিচিত মুখ ছিলেন, যার হাসিমুখ আর সদালাপী স্বভাবের জন্য তিনি সকলের কাছে প্রিয় ছিলেন।
নুরুল আলমের মৃত্যুর খবর আকবরপাড়া গ্রামে পৌঁছানোর সাথে সাথেই নেমে আসে শোকের কালো ছায়া। যে গ্রাম একসময় তার হাসিতে মুখরিত ছিল, সেই গ্রামেই এখন কেবল বিষাদের সুর। পাড়া-প্রতিবেশীরা, আত্মীয়-স্বজনরা, বন্ধু-বান্ধবরা – কেউই যেন এই মর্মান্তিক সংবাদ বিশ্বাস করতে পারছেন না। সকলের চোখে এখন শুধুই জল, হৃদয়ে গভীর শূন্যতা। একজন hardworking, সদাহাস্যময় মানুষ এভাবে অকালে চলে যাবেন, তা যেন কারোরই কল্পনায় ছিল না। পুরো গ্রামে এক পিনপতন নীরবতা, যা কেবলই গভীর শোকের প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি ঘর, প্রতিটি মন যেন নুরুল আলমের অকাল প্রয়াণে ভারাক্রান্ত।
এই দুর্ঘটনার সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দিকটি হলো নুরুল আলমের তিন মাসুম সন্তান। তাদের নিষ্পাপ চোখে এখনো বাবার ফিরে আসার স্বপ্ন। তারা জানে না, তাদের বাবা আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না, তাদের কোলে তুলে নেবেন না, তাদের সাথে খেলবেন না। ছোট্ট শিশুরা জানে না যে তাদের মাথার উপর থেকে ছাতাটা সরে গেছে। তাদের নিষ্পাপ হাসি আর কৌতূহলী প্রশ্নগুলো এখন পরিবারের সদস্যদের বুকে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। এই কঠিন সত্যটি তাদের কীভাবে জানানো হবে, এই চিন্তাটাই এখন পরিবারের সদস্যদের কুরে কুরে খাচ্ছে। যে বাবা তাদের ভবিষ্যতের জন্য নিরলস পরিশ্রম করছিলেন, সেই বাবাই আজ নেই। এই তিন শিশুর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত, তাদের মায়ের বুকচেরা আর্তনাদ আর অশ্রুসিক্ত চোখ যেন পুরো সমাজের কাছে এক নীরব প্রশ্ন।
নুরুল আলমের অকাল প্রয়াণ কেবল একটি পরিবারের ক্ষতি নয়, এটি প্রবাসীদের জীবনের ঝুঁকি এবং ত্যাগের এক নির্মম প্রতিচ্ছবি। হাজার হাজার প্রবাসী নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশের মাটিতে পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখেন, পরিবারের মুখে হাসি ফোটান। কিন্তু অনেক সময়ই তাদের এই ত্যাগ অগোচরেই থেকে যায়, অথবা এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন তারা।
এই শোকের মুহূর্তে আমরা নুরুল আলমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। বিশেষ করে তার তিন সন্তান ও স্ত্রীর জন্য প্রার্থনা করি, যেন তারা এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার শক্তি পান। সমাজের বিত্তবান এবং সরকারের কাছে অনুরোধ, এই শোকাহত পরিবারের পাশে যেন সবাই দাঁড়ায় এবং তাদের ভবিষ্যতের পথচলাকে কিছুটা হলেও সহজ করে তোলে। নুরুল আলম হয়তো শারীরিকভাবে নেই, কিন্তু তার স্মৃতি এবং আত্মত্যাগ চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার বিয়োগান্তক কাহিনী প্রবাসীদের জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে আবারও তুলে ধরলো।



