সুদান, সংঘাত আর অস্থিতিশীলতার এক রক্তাক্ত ভূমি। গত কয়েক মাস ধরে চলা এই সংঘাত প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য প্রাণ, গুঁড়িয়ে দিচ্ছে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন। কিন্তু সম্প্রতি যে খবরটি বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে, তা হলো একটি কিন্ডারগার্টেনে ড্রোন হামলা – যেখানে প্রাণ হারিয়েছে ৪৬ জন নিষ্পাপ শিশুসহ মোট ১১৪ জন মানুষ। এই ঘটনা কেবল একটি হামলার খবর নয়, এটি মানবতাবিরোধী এক জঘন্য অপরাধের স্পষ্ট চিত্র।
**কী ঘটেছিল সেদিন?**
সূত্রের খবর অনুযায়ী, সুদানের চলমান গৃহযুদ্ধে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) দ্বারা পরিচালিত এই ড্রোন হামলাটি ছিল অত্যন্ত নৃশংস এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একটি কিন্ডারগার্টেন, যেখানে শিশুরা তাদের শৈশবের আলোয় হাসতে এবং শিখতে এসেছিল, সেটিই পরিণত হলো মৃত্যুর উপত্যকায়। হামলার আকস্মিকতা এবং ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, অনেক শিশু বুঝে ওঠার আগেই চিরতরে হারিয়ে গেল। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিল কতো স্বপ্ন, কতো সম্ভাবনা! ৪৬ জন শিশুর মৃত্যুর খবর একবিংশ শতাব্দীর সভ্যতার মুখে এক তীব্র চপেটাঘাত। তাদের বেশিরভাগেরই হয়তো মাত্র দু’এক বছর বয়স হয়েছিল।
**কারা এই হামলার শিকার?**
এই হামলার সবচেয়ে মর্মান্তিক দিকটি হলো এর শিকারদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক শিশু। কিন্ডারগার্টেনের কোমলমতি শিশুরা, যাদের একমাত্র অপরাধ ছিল ভুল সময়ে ভুল স্থানে থাকা। তাদের নিষ্পাপ চোখে ছিল ভবিষ্যতের স্বপ্ন, অথচ তা এক নিমেষেই নিভে গেল। নিহতদের মধ্যে শিশুরা ছাড়াও ছিলেন শিক্ষক, অভিভাবক এবং অন্যান্য বেসামরিক নাগরিক। যুদ্ধক্ষেত্রে বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানানো আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, আর শিশুদের ওপর হামলা তো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম অপরাধের সমতুল্য।
**সুদানের চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপট:**
গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে সুদানে সেনাবাহিনী (SAF) এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (RSF) মধ্যে তীব্র ক্ষমতার লড়াই চলছে। এই সংঘাত দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে, যা দেশের অর্থনীতি, সমাজ এবং মানব জীবনকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছেছে, এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে বেসামরিক মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্ডারগার্টেনে হামলার ঘটনাটি এই চলমান সংকটেরই একটি ভয়াবহ উদাহরণ, যেখানে মানবিক মূল্যবোধ সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে গেছে।
**আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা এবং আমাদের করণীয়:**
সুদানের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া প্রায়শই হতাশাজনক। এমন একটি জঘন্য ঘটনার পরও যদি বিশ্ব নীরব থাকে, তবে তা আরও বড় ট্র্যাজেডির জন্ম দেবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু কেবল নিন্দা যথেষ্ট নয়।
আমরা আশা করি, এই ঘটনা বিশ্ব নেতাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে যে সুদানের পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা এবং সংঘাতের একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, শিশুদের মতো নিষ্পাপ প্রাণের ওপর এমন হামলা যেন আর কোনো দিন না ঘটে, তা নিশ্চিত করা।
এই হামলা শুধু সুদানের কিন্ডারগার্টেনের শিশুদের ওপর হয়নি, এটি পুরো মানবজাতির উপর আঘাত। আমরা সুদানের নিহত শিশুদের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তাদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। প্রার্থনা করি, দ্রুত এই সংঘাতের অবসান ঘটুক এবং সুদানে আবার শান্তির সূর্য উদিত হোক।

