## আমরা নির্বাচনে জোট করবো না : জামায়াত আমির
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোট ও পাল্টা জোট একটি স্বাভাবিক চিত্র। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে ছোট-বড় সকল দলই সাধারণত জোটবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা দেখায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে একটি বড় রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এক ব্যতিক্রমী ঘোষণা এসেছে, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর, স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন যে, তাদের দল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ধরনের রাজনৈতিক জোটে যাবে না।
**একক লড়াইয়ের ঘোষণা: কেন এই পরিবর্তন?**
জামায়াত আমীরের এই ঘোষণা দলের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে বা এক সংবাদ সম্মেলনে এসেছে বলে জানা যায়। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, জামায়াতে ইসলামী একটি জনগণের দল এবং তারা জনগণের সমর্থনের উপর ভিত্তি করেই নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। অতীতে বিভিন্ন জোটে গিয়ে দল তার নিজস্ব স্বকীয়তা ও জনগণের কাছে তাদের বার্তা পৌঁছাতে অনেক সময় সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে জামায়াত তাদের দীর্ঘদিনের জোট-রাজনীতির পথ থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিল।
**রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সিদ্ধান্তের তাৎপর্য**
বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে জোটের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বড় দুই রাজনৈতিক শক্তি – আওয়ামী লীগ ও বিএনপি – বরাবরই তাদের নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে জোটকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। জামায়াতে ইসলামীও অতীতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে, যা ‘চারদলীয় জোট’ নামে পরিচিত ছিল। এই জোটের অধীনে জামায়াত জাতীয় সংসদে একাধিকবার প্রতিনিধিত্ব করেছে। এই প্রেক্ষাপটে জামায়াতের এককভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি সাহসী এবং তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকতে পারে দেশের রাজনীতিতে।
* **নিজস্ব শক্তি যাচাই:** প্রথমত, এটি জামায়াতকে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি ও জনভিত্তি যাচাই করার সুযোগ দেবে। এককভাবে নির্বাচন করে তারা তাদের প্রকৃত জনপ্রিয়তা এবং জনগণের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা পরিমাপ করতে পারবে।
* **নতুন কৌশল:** দ্বিতীয়ত, অন্যান্য ছোট দল বা ইসলামী দলগুলোর জন্য এটি একটি নতুন চিন্তার খোরাক হতে পারে – তারা কি এককভাবে লড়বে নাকি নতুন কোনো জোটের সন্ধান করবে?
* **প্রধান দলগুলোর ওপর প্রভাব:** তৃতীয়ত, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী সমীকরণেও এর প্রভাব পড়তে পারে, কারণ জামায়াতের ভোটব্যাংক অনেক আসনেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জামায়াত যদি এককভাবে ভোট টানতে সক্ষম হয়, তবে তা অনেক আসনের ফলাফলে প্রভাব ফেলবে।
**চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পথরেখা**
তবে এককভাবে নির্বাচন করা জামায়াতের জন্য সহজ হবে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জোটবদ্ধ নির্বাচন জেতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জামায়াতকে সাংগঠনিকভাবে আরও সুসংহত এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত তাদের একটি সুসংগঠিত নির্বাচনী প্রক্রিয়া দাঁড় করাতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াতের এই সিদ্ধান্ত তাদের অতীত ভুলের সংশোধন এবং নিজেদের পরিচয়ে জনসমক্ষে আসার একটি প্রয়াস। এটি জামায়াতকে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী এবং স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তোলার একটি প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে।
**উপসংহার**
সব মিলিয়ে, জামায়াত আমীরের ‘জোট করবো না’ ঘোষণা বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে নিঃসন্দেহে। এটি একদিকে যেমন দলটির নিজস্ব রাজনৈতিক পথচলায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, তেমনি অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক সমীকরণকেও প্রভাবিত করবে। দেখার বিষয়, জামায়াতের এই একক লড়াইয়ের কৌশল কতটা সফল হয় এবং এর ফলস্বরূপ দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট কেমন রূপ নেয়। সামনের দিনগুলোতে এই সিদ্ধান্তের প্রভাবগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
—



