বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। খবর থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত যোগাযোগ, বিনোদন থেকে জনমত গঠন – সবকিছুর কেন্দ্রে রয়েছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (সাবেক টুইটার) এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো। কিন্তু আফগানিস্তান থেকে আসা সাম্প্রতিক এক খবর বিশ্বের নজর কেড়েছে, যা দেশটির তথ্য প্রবাহ এবং নাগরিক স্বাধীনতার ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। আফগানিস্তানে কিছু নির্দিষ্ট সামাজিক মাধ্যম কনটেন্টের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাতে এই তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং এক্স (সাবেক টুইটার)-এর মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোতে নির্দিষ্ট ধরনের কনটেন্ট সীমিত করতে ফিল্টার প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে কী ধরনের পোস্ট এই ফিল্টারের আওতায় পড়ছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়, যা এই নিষেধাজ্ঞাকে আরও ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছে। এই কনটেন্ট নিষেধাজ্ঞা এমন এক সময়ে এলো, যখন আফগানিস্তান দেশজুড়ে দুই দিনের জন্য ইন্টারনেট ও টেলিকম পরিষেবা বন্ধের ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ পার করেছে। এই ধরনের পদক্ষেপগুলো আফগান জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার এবং বাইরের বিশ্বের সাথে তাদের যোগাযোগের ক্ষমতাকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করছে। ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কনটেন্টের ওপর এমন বিধিনিষেধ আরোপ করা, সরকারের তথ্য নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
কাবুলের কিছু সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা বর্তমানে তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিও দেখতে পাচ্ছেন না এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকসেসেও সমস্যা হচ্ছে। এটি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো সাধারণ ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন ডিজিটাল জীবনকে প্রভাবিত করছে। যখন নির্দিষ্ট কনটেন্ট ফিল্টার করা হয়, তখন ব্যবহারকারীরা কেবল তথ্য প্রাপ্তি থেকেই বঞ্চিত হন না, বরং তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাও খর্ব হয়।
বিবিসি আরও জানিয়েছে, তালেবান সরকারের এক সূত্রের বরাত দিয়ে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্সের মতো প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট ধরনের কন্টেন্ট সীমিত করতে কিছু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর ব্যাপারে তালেবান সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এটি আরও বেশি ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে এবং এ পদক্ষেপের পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা তৈরি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যার অভাবের কারণে এটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর এমন বিধিনিষেধ আরোপের ঘটনা আফগানিস্তানে তথ্য প্রবাহের স্বাধীনতাকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে যেখানে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানার জন্য অনেক আফগান নাগরিক এসব প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল। এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে জনগণের কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে এবং গুজব ছড়ানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এ ধরনের পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে বাক স্বাধীনতা এবং ইন্টারনেটের উন্মুক্ত ব্যবহারের পক্ষে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। আমরা আশা করি, এই বিষয়ে দ্রুত একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে এবং সাধারণ মানুষের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। অন্যথায়, আফগানিস্তান ধীরে ধীরে একটি তথ্যবিহীন অন্ধকার যুগে প্রবেশ করতে পারে, যা দেশ ও জাতির জন্য শুভ ইঙ্গিত নয়।



