## শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন মোড় নিয়ে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা। মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এই লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানান, যা দেশের বিচারপ্রত্যাশী মানুষের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
**আইন উপদেষ্টার ঘোষণা: প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে চিঠি**
সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ওনাদের এক্সট্রাডিশনের জন্য আমরা চিঠি দিচ্ছি।” তার এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয় যে, সরকার এই দুই নেতার প্রত্যর্পণের বিষয়ে অত্যন্ত সিরিয়াস। দীর্ঘদিন ধরে এই দুই নেতার বিচারের অপেক্ষায় ছিল দেশবাসী, এবং সরকারের এই উদ্যোগ সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
**ভারতের প্রতি ‘বাড়তি দায়িত্ব’ পালনের আহ্বান**
মি. নজরুল জোর দিয়ে বলেন যে, দণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারতের এখন একটি বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, “পাশাপাশি ওনাদের প্রত্যর্পণ করার জন্য, যেহেতু ওনারা এখন কনভিকটেড মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, কাজেই আমরা মনে করি ভারতের এখন বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে তাদের ফেরত দেওয়ার জন্য, বাংলাদেশের মানুষের বিচারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য।”
আইন উপদেষ্টা ভারতকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি (Extradition Treaty) বিদ্যমান রয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী ভারত যেন তার বাধ্যবাধকতা পালন করে, সে বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করা হবে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্মান এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ভারতের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে তিনি মনে করেন।
**আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তাভাবনা**
অন্তর্বর্তী সরকার শুধু দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক ফোরামের সহায়তা নেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। মি. নজরুল জানান, “একইসাথে কনভিকটেড ব্যক্তিদের দেশে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক যে অপরাধ আদালত রয়েছে, সেখানে আমরা কোনো রকম অ্যাপ্রোচ করতে পারি কিনা সেটা বিচার-বিবেচনার জন্য আমরা অচিরেই বসে সিদ্ধান্ত নেব।”
বিশেষ করে নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাছে সহায়তা চাওয়ার বিষয়টি সরকার গভীরভাবে বিবেচনা করছে। এটি সরকারের দৃঢ় সংকল্পের বহিঃপ্রকাশ যে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে তারা কোনো পথই ছাড়তে রাজি নয়।
**শেষ কথা**
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে দেশে ফিরিয়ে এনে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের এই উদ্যোগ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বাংলাদেশ এখন তাকিয়ে আছে ভারতের প্রতিক্রিয়ার দিকে এবং একইসাথে আন্তর্জাতিক আদালতের সম্ভাব্য সহযোগিতার দিকে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এই দীর্ঘ পথচলায় জনগণের আশা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণ করাই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য।



