গভীর শোক ও দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের এক কিংবদন্তী, প্রবীণ জননেতা ও মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ আর নেই। আজ রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে জাতি হারালো এক স্বপ্নদ্রষ্টা নেতাকে, যার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ছিল দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। দেশ-বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করেও শেষ রক্ষা হলো না। তার প্রয়াণে জাতি হারালো একজন অভিভাবককে, যিনি তার জ্ঞান, প্র প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার আলোয় আলোকিত করেছেন অসংখ্য মানুষকে।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে জড়িয়ে থাকা এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। ১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর ভোলার কোরালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই রাজনীতিবিদ তার তারুণ্যেই প্রবেশ করেন রাজনীতিতে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন আপোষহীন এক নেতা। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম রূপকার হিসেবে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। ডাকসু’র ভিপি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়ার ঐতিহাসিক ঘোষণায় তার নামটি উজ্জ্বল হয়ে আছে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ছিলেন মুজিব বাহিনীর অন্যতম প্রধান সংগঠক। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকে তিনি সবসময়ই দেশ গড়ার সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বহুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে তার অবদান অনস্বীকার্য। সহজ-সরল জীবনযাপন, অসাধারণ বাগ্মীতা এবং নির্লোভী চরিত্রের জন্য তিনি ছিলেন আপামর জনসাধারণের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের প্রয়াণ বাংলাদেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো, তা পূরণ হওয়া কঠিন। তার রাজনৈতিক আদর্শ, দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং প্রজ্ঞা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন সততা ও আদর্শের প্রতীক।
আমরা অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তার স্মৃতির প্রতি রইলো আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। তিনি তার কর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।


